Marriage Ceremony: ভাঙল প্রাচীন রীতি, চন্দননগরে চার হাত এক করলেন মহিলা ‘পুরুত’ অনীতা মুখোপাধ্যায়

TV9 Bangla Digital | Edited By: সৈকত দাস

Nov 29, 2021 | 4:49 PM

Chandan Nagar: যাঁর মুখে "যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব'' মন্ত্রোচ্চারণে দুই হৃদয় বাঁধা পড়ল তিনি অনীতা মুখোপাধ্যায়। পুজো ও বিয়ের পৌরহিত্য করা যাঁর শুধু পেশা নয়, নেশাও বটে। পুজো অনেক করলেও, এই প্রথম বিয়ে দিলেন এই মহিলা 'পুরুত'।

Marriage Ceremony: ভাঙল প্রাচীন রীতি, চন্দননগরে চার হাত এক করলেন মহিলা পুরুত অনীতা মুখোপাধ্যায়
বিয়ে দিচ্ছেন অনীতা দেবী। নিজস্ব চিত্র।

Follow Us

হুগলি: চন্দননগরের বড়বাজারে রবিবারের সন্ধ্যে। পরিবার, আত্মীয়-স্বজনকে সাক্ষী রেখে বড়বাজরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিরত যুবক উৎসব ও পঞ্জাবের অম্বলার তরুণীর চার হাত এক হল। এর মধ্যে নতুনত্য কিছু নেই। কিন্তু এই চার হাত এক করার কাজে পৌরোহিত্য যিনি করলেন তিনি একজন মহিলা, জেলায় যা প্রথম। যাঁর মুখে “যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব” মন্ত্রোচ্চারণে দুই হৃদয় বাঁধা পড়ল তিনি অনীতা মুখোপাধ্যায়। পুজো ও বিয়ের পৌরহিত্য করা যাঁর শুধু পেশা নয়, নেশাও বটে। পুজো অনেক করলেও, এই প্রথম বিয়ে দিলেন এই মহিলা ‘পুরুত’।

বড়বাজার অঞ্চলের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বাঙালি যুবক উৎসবের সঙ্গে বিয়ের ঠিক হয় পাঞ্জাবের আম্বালার সাক্ষীর। সেই বিয়ের দিনের কথা জানার পরেই উৎসবের মা সঙ্ঘমিত্রা নায়েককে মহিলা পুরোহিত দিয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন ওই আবাসনেরই বাসিন্দা তপতী কুণ্ডু। না, বাধো বাধো ঠেকেনি তাঁর। মনে গেড়ে বসেনি প্রাচীন সামাজিক রীতি। বরং পুত্রের বিয়ে কোনও মহিলা পুরোহিত দেবেন, এটা ভেবেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন সঙ্ঘামিত্রা দেবী। আনন্দের সঙ্গে সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেন নায়েক দম্পতী। খবর দেওয়া হয় আরামবাগের মহিলা পুরোহিত অনীতা মুখোপাধ্যায়কে।

অনীতা দেবী এর আগে পুজোর কাজ অনেক করলেও কাউকে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ করার কাজে পৌরোহিত্য করেননি। তাই ডাক পেয়ে নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। সাহায্য চান দীর্ঘদিন ধরে পৌরোহিত্য করা পুরোহিতদের। কিন্তু সমাজের প্রথা ভেঙে একজন মহিলা বিয়ের কাজে পৌরোহিত্য করবেন, এটা পুরুষ পুরোহিতরা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের তরফে কোনওরকম সাহায্য পাননি তিনি।

অগত্যা নিতেই হল একলা চলা নীতি। নিজেই বিভিন্ন বই পড়ে প্রস্তুত হয়ে যান অনীতা দেবী। তার পর রবিবার তাঁরই পৌরোহিত্যে চন্দননগরের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন দুই তরুণ-তরুণী। নায়েক দম্পতীর আত্মীয় থেকে প্রতিবেশী সবাই কিন্তু সমাজের প্রথা ভাঙা এই বিবাহে খুব খুশি। দু’একজন তো বলাও শুরু করেছেন, যে তাঁদের পরিবারের পরবর্তী বিবাহে এই মহিলা পুরোহিতকেই ডাক দেবেন।

আর অনীতা দেবী নিজে কী বলছেন?

তাঁর কথায়, “আমাদের বাড়িতে পুজো চলটা খুব ছিল। ছোট থেকে মা-ই আমাকে চণ্ডীপাঠ ও গীতাপাঠ শিখিয়ে ছিলেন। বাড়িতেও লক্ষ্মীপুজো করতাম। আমার মা মারা যাবার পর হঠাৎ কেমন মোড় ঘুরে গেল। আমি নিজেও জানতাম না যে, পুজো করতে আমার এতটা ভাল লাগবে। তখন মনে হল ভাল করো শিখি”।

তিনি যোগ করেন, “পুজোপাঠ শেখার জন্য অনেক জায়গায় দৌড়েছি। সকলেই বলল, মেয়েদের এই শিক্ষা দেওয়া হয়না”। এর পর সটান কলকাতায় পাড়ি দেন অনীতা দেবী। ছুটির দিনগুলিতে পুজোপাঠের ক্লাস করতেন তিনি। শিখেছেন পুজো পদ্ধতি, মন্ত্র। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে দুর্গাপুজো করার ডাকও পান। কিন্তু বাধাও এসেছে।

একজন মহিলা পুরোহিতকে দিয়ে পুজো করাতে অনেকেরই অনীহা দেখা যায়। তার পর পুরুষ পুরোহিতদের চোখরাঙানি ছিল। এই বাধাতে বেশ কিছুদিন পুরুতের কাজ করা হয়নি তাঁর। অনীতা দেবীর কথায়, “খুব কান্নাকাটি করতাম পুজো পাচ্ছিনা বলে। আবার পুজো পেলাম এন্টালিতে। তার পর বিয়ে, গৃহপ্রবেশ অনেকগুলো বুক হয়ে গিয়েছে”।

বছর দুয়েক আগে বাংলায় একটা সিনেমা ছিল ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। ঋতাভরী চক্রবর্তী অভিনীত সেই সিনেমায় তিনিও পুরোহিতের কাজ করতেন। সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে সেই কাজ করতে গিয়ে শ্বশুরবাড়িতেও ঠোক্কর খান। সেই সিনেমাটা দেখেছেন? অনীতা দেবীকে প্রশ্ন করতেই হাসি খেলে যায় তাঁর মুখে। বলেন, “দেখেছি, খুব এনজয় করেছি। সিনেমার মাধ্যমে লোকশিক্ষা দেওয়ার কাজটা ভাল লেগেছে। আবার অনেক সিরিয়ালেও দেখেছি।” এখন সামনে পরপর অনেকগুলো পুজো, গৃহপ্রবেশ ও বিয়ে ‘বুক’ রয়েছে তাঁর। ব্যস্ততা তাই তুঙ্গে।

আরও পড়ুন: Diamond Harbour News: ৩৭ বছর পর মিলল স্ত্রীর খোঁজ, দ্বিতীয়কে রেখেই প্রথম বউয়ের সঙ্গে পুনর্মিলন প্রৌঢ়ের |

Next Article