হাওড়া: বিশ্বকর্মা পুজোর দুপুরে তিন ভাই মিলে বাড়ির ৪ তলার চিল ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলে। হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে অন্ধকার হল আকাশ। বৃষ্টি নামার আশঙ্কায় বাড়ির বড়রা নীচে নামতে বলে তিন খুদে সদস্যকে। কথা মতো ঘুড়ি নামিয়ে নীচে চলেও আসছিল তিন জন। কিন্তু হঠাৎই আলোর ঝলকানি আর তার পর জোরাল শব্দ। তিন ভাইয়ের একজন ছাদেই লুটিয়ে পড়ল। মারা গেল জিৎ হাজরা (১৬) নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। শুক্রবার চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বেলুড়ে।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি হয় বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোডে। জিৎ নামে ওই কিশোরের পারিবারিক সূত্রে খবর, দুপুর থেকে তিন ভাই মিলে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল ছাদে। কিন্তু মেঘ করছে দেখে তাদের সবাইকে নীচে নেমে আসতে বলা হয়। কথা মতো তিন ভাই সিঁড়ি দিয়ে চলেও আসছিল। কিন্তু তখনই হল দুর্ঘটনা।
সিঁড়ি দিয়ে অপর দুই জ্যাঠতুতো ভাই সুমন ও রিত্রি নেমে আসতে পারলেও নামতে পারেনি জিৎ। ছাদেই বাজের আঘাতে লুটিয়ে পড়ে সে। অচেতন হয়ে পড়ে ১৬ বছরের নাবালক। ছাদে ছুটে যান বাড়ির সদস্যরা।
এর পর জেঠু গৌতম হাজরা ও অন্যরা মিলে জিতকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন। ওই কিশোরকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রথমে বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতাল ও পরে গোলাবাড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে জিতের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন ঘুড়ি ওড়াতে ভালবাসতো জিৎ। ক’দিন আগেই বাবা সুজিত হাজরার বাঁ পায়ের হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ফলে ইদানিং সুজিতের বাবা ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। কিছুদিন পরই হাঁটুর স্টিচ কাটতে নিয়ে যাওয়ার কথা। বাবা একটি বেসরকারি স্কুলে আঁকার শিক্ষকতা করেন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতে ডেকরেশনের কাজ করেন। ছেলের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান গোটা পরিবার। মা চন্দনা হাজরা বিলাপ করছেন, কেন ও ঘুড়ি ওড়াতে গেল। এদিন মৃত কিশোরের জেঠিমা রূপালি হাজরা বলেন, ‘‘ওরা তিন ভাই বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল। তার পর হঠাৎ এত জোরে বাজ পড়লো যে দুই ভাই নামতে পারলেও জিৎ আর নামেনি… ’’
উল্লেখ্য, রাজ্যে বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা এ বছর সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটছে। এবারের বর্ষার মরসুমে একের পর এক বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬০ জনের। একদিনেই প্রাণ গিয়েছিল ২৯ জনের।
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত চন্দনা, হিংসা তদন্তে আরও একটি মামলা দায়ের CBI-র