হাওড়া : শনিবার বাগুইআটি থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ডোমজুড়ের বাসিন্দা এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে। তিনি উলুবেড়িয়ার এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থারই পেমেন্টের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে পার্কস্ট্রিটে গিয়েছিলেন ভাস্কর মাঝি নামে বছর বত্রিশের এক ব্যক্তি। এরপর সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয়। মুক্তিপণ হিসেবে ২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল পরিবারের থেকে। এরপর শনিবার গভীর রাতেই ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে বাগুইআটিতে অভিযান চালান ডোমজুড় থানার পুলিশকর্মীরা। পুলিশি অভিযানে পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাত জন অপহরণকারীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, শনিবার যখন ভাস্কর মাঝি নামে মাঝবয়সি ওই ব্যক্তি সংস্থার টাকা নিয়ে বাগুইআটিতে দিতে গিয়েছিল। এরপর সেখানে বলা হয়, ওই ব্যক্তি যে টাকা নিয়ে এসেছেন, সেগুলি জাল নোট। ভাস্কর মাঝিকে তারা সেখানেই আটকে রাখে এবং অপহৃতের স্ত্রীকে ফোন করা হয় সেখান থেকে। বলা হয়, ২ লাখ টাকা পাঠালে, তাহলেই ভাস্করকে ছাড়া হবে। ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রীকে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বরও দেওয়া হয় বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। ভাস্কর বাবুর স্ত্রী তখন কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে তড়িঘড়ি প্রথমে ওই অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন এবং তারপর পরিবারের বাকি লোকেদের বিষয়টি জানান।
পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, পরবর্তী সময়ে ওই ২ লাখ টাকার পরিবর্তে জমির দলিল দেওয়ার শর্ত দেয় অপহরণকারীরা। সেই মতো ভাস্করকে উদ্ধার করতে জমির দলিল অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় পরিবারের লোকেরা। তখনও পর্যন্ত বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি। কথা মতো, হাওড়ার কোনা মোড় এলাকায় ওই অপহরণকারীদের মধ্যে একজনের সঙ্গে দেখাও করেন ভাস্করের পরিবারের লোকেরা। সেখানে পরিবারের লোকেদের বলা হয়, আগে জমির দলিল দিতে হবে, তারপর ছাড়া পাবে ভাস্কর। কিন্তু সেই শর্ত রাজি হননি পরিবারের লোকেরা। জমির দলিল নিতে আসা ওই ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরে তারা নিয়ে যায় ডোমজুড় থানার পুলিশের কাছে।
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বাগুইআটিতে অভিযান চালান পুলিশকর্মীরা। সেখান থেকেই ওই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধার করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয় সাত অপহরণকারীকে। এদিন ধৃতদের হাওড়া আদালতে পেশ করা হয় অভিযুক্তদের। এর পাশাপাশি ওই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশকর্মীরা। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশের তরফ থেকে মুখ খোলা হচ্ছে না। তবে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
সংস্থার ওই ১০ লাখ নগদ টাকা নিয়ে ওই ব্যক্তি কেন গিয়েছিলেন? উল্লেখ্য, একবারে ২ লাখ টাকার বেশি অঙ্কের নগদ আর্থিক লেনদন আইন বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি ১০ লাখ টাকা কেন নগদে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও এখনও অধরা। পাশাপাশি ওই নোটগুলি সত্যিই জাল নোট ছিল কি না, সেই বিষয়টিও এখনও স্পষ্ট নয়।