হাওড়া: ঘুরে গেল আনিসকাণ্ডের মোড়! আমতা থানার তিন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করল সিট। গাফিলতির অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কনস্টেবল, এএসআই ও এক হোমগার্ড। এএসআই নির্মল
দাস, কনস্টেবল জিতেন্দ্র হেমব্রম, হোমগার্ড কাশীনাথ বেরাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিটের তদন্তে উঠে আসছে আরও বড় চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার দিন আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশই। প্রাথমিক তদন্তে তেমনটাই জানতে পারছে সিট। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করা হচ্ছে। তবে সাসপেন্ড হওয়া এই তিন পুলিশ কর্মীই সেদিন আনিসের বাড়িতে গিয়েছিলেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যে তিন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? জানা যাচ্ছে, ঘটনার দিন আনিসের বাবা যখন ওই তিন পুলিশ কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁরা নির্লিপ্ত ছিলেন। তাঁরা ঘটনাস্থলে যেতে দেরি করেন। তদন্ত গতি সেখানে রুদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে জানতে পেরেছে সিটও।
আনিস কাণ্ডে আমতা থানার পুলিশকে সোমবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী পুলিশদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিটের দুই শীর্ষ আধিকারিক। ঘটনার দিন কারা কারা ডিউটিতে ছিলেন, তৈরি করা হয় একটি তালিকা। তাঁদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় থানার ওসিকেও। সোমবার রাত সাড়ে দশটার মধ্যে সিটের ডিআইজি সিআইডি অপারেশন মিরাজ খালিদ, বারাকপুর কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার ধ্রুবজ্যোতি দে-র তদন্তকারী দল নিয়ে আমতা থানায় পৌঁছন।
জেরা করার পর তিন জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। একজন হোমগার্ড, একজন এএসআই ও একজন কনস্টেবল রয়েছেন। তাঁদের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে তদন্তকারীদের মনেও। সিটের সুপারিশ মেনেই তিন জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের দাবি, জনস্বার্থে এই সাসপেন্ড, যেহেতু তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। এই মুহূর্তে একটা বিষয় সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, এই সিদ্ধান্তটা নিতেই জেলা পুলিশের তিন দিনের বেশি সময় লাগল। পরিবারের তরফে প্রথম থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
আনিস কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছিল একাধিক প্রশ্ন। ১৯ তারিখ অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ কি আদৌ আনিসের মিসিং মোবাইল খোঁজার চেষ্টা করেছিল? করলে পুলিশ আগেই জানতে পারত, মোবাইল আনিসের বাড়িতেই আছে। একুশ তারিখ পরিবারের লোকজন না বলা পর্যন্ত পুলিশ জানতেই পারল না মোবাইল বাড়িতে। মোবাইল ট্রাক করল না কেন পুলিশ?
দ্বিতীয়ত, কেন তিনদিন কেটে যাওয়ার পরও পুলিশ স্কেচ তৈরি করল না? আনিসের বাবা বার বার বলছেন ওই রাতে যারা এসেছিল তাদের দেখলে চিনতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শণাক্তকরণের কেন চেষ্টা হল না? আনিসের গ্রামে ঢোকার রাস্তায় সিসিটিভি আছে। কেন পুলিশ সেই ফুটেজ চেক করল না। তাহলে জানা যেত ওই রাতে কারা গ্রামে ঢুকেছিল?
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন গ্রামের এক সিভিক ভলেন্টিয়ার ঘটনার পর নিজে থেকে মন্ত্যব্য করলেন, যে আনিস আত্মহত্যা করেছেন।শুরু থেকেই আনিসের পরিবার অভিযোগ করেছে, ওই রাতে পুলিশ এসেছিল। তার পর কেন জেলা পুলিশ আমতা থানার পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করল না। তবে সিট তদন্ত শুরু করেই প্রথমে পুলিশ কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। ধীরে ধীরে এই তত্ত্ব জোরাল হচ্ছে।