কলকাতা: ক্রমেই রহস্যের ঘনঘটা। হাওড়ার টাকা উদ্ধারের নতুন তথ্য। ঝাড়খণ্ডের সরকার ফেলতেই এই চক্রান্ত, দাবি কংগ্রেস বিধায়কের। শুধু অভিযোগ নয়, এফআইআর দায়ের করেছেন ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস বিধায়ক অনুপ সিংয়ের। কোটি কোটির কেলেঙ্কারির মধ্যেই ফের নগদ উদ্ধার হয়েছে হাওড়ার পাঁচলায়। গাড়িতেই ৪৯ লক্ষ টাকা! টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ক-সহ পাঁচ। তিন বিধায়ককে সাসপেন্ড করেছে কংগ্রেস। সকালে পাঁচলা থানায় আসেন তিন বিধায়কের পরিবার ও তাঁদের আইনজীবী। তাঁরা জানান, ঝাড়খণ্ডে আগামী কয়েক মাস নানা অনুষ্ঠান রয়েছে। দুঃস্থদের জন্য কেনাকাটা করতেই কলকাতায় এসেছিলেন। প্রতিবছরই কেনাকাটা করতে আসেন।
শনিবার বিকালে সাঁকরাইলের নামঘর মুম্বই রোড থেকে ঝাড়খণ্ডের জামতারার কংগ্রেস বিধায়ক ইরফান আনসারির গাড়ি আটকায় পুলিশ। ওই গাড়িতেই ছিলেন রাজেশ কাচ্ছপ ও নমন বিকসল কোঙ্গারি নামে আরও ২ কংগ্রেস বিধায়ক। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ব্যাগভর্তি টাকা। তাঁদের পাকড়াও করে পাঁচলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। টাকা গুনতে আনা হয় মেশিন। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ঝাড়খন্ডের বিধায়কদের।
জানা যাচ্ছে, রাঁচির আরগৌরা থানায় বার্মো এলাকার বিধায়ক অনুপ সিং। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের ইউপিএ অ্যালায়েন্সের সরকারকে ফেলে দিতে ছক করছে বিজেপি। তারই শিকার হয়েছেন এই কংগ্রেস বিধায়ক। এই তদন্তভার ইতিমধ্যেই সিআইডি হাতে নিয়েছে। অনুপ সিংয়ের স্পষ্ট অভিযোগ, তাঁদেরকে আগে ডাকা হয়েছিল গুয়াহাটিতে। সেখানে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মার বৈঠক হয়। অনুপ সিং নিজেও সেই মিটিংয়ে ছিলেন। অভিযোগ, সেখানে প্রত্যেক বিধায়ক পিছু ১০ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বস্ত করা হয়েছিল। হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজেই নাকি সেই আশ্বাস দিয়েছিলেন। যদি সরকার ফেলতে সাহায্য করেন, তাহলে প্রত্যেক বিধায়ককে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এমনকি পছন্দমতো মন্ত্রিত্ব দেওয়া নিয়েও রফা হয়। অনুপ সিংয়ের দাবি, তিনি এই ধরনের অসাংবিধানিক কাজ থেকে সরে এসেছিলেন।
অনুপ সিং দাবি করেছেন, শনিবারই এই নিয়ে কলকাতায় কংগ্রেস এমএলএ-দের বৈঠক ছিল। তিন বিধায়ক এই কারণেই কলকাতায় এসেছিলেন।
সিআইডি প্রতারণা ৪২০, কমন ইন্টেশন ৩৪ বি,সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ১২০বি রয়েছে।
এই টাকা উদ্ধারে রাজনৈতিক চর্চা তুঙ্গে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “কংগ্রেসের বিধায়কদের কাছ থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা পাওয়া গিয়েছে। এতদিন তো কংগ্রেসের নেতার প্রচুর কথা বলছিলেন, এবার তারা বুঝুক কী করবেন।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “তদন্ত হওয়া উচিত। কোথায় যাচ্ছিল টাকা, সোনিয়া গান্ধীকে ধরে এসএসসি দুর্নীতিতে উদ্ধার হওয়া টাকা পাচার হচ্ছিল কিনা, এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।”
তবে এটাকে পাল্টা হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, হর্স ট্রেডিং করছে বিজেপি। বিষয়টি স্পষ্ট কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা জয়রাম রমেশের টুইটেও। তাঁরও বক্তব্য বিজেপি বিরোধী নেতাদের কিনে নিয়ে সরকার ফেলার চেষ্টা করছে।
সচেতকরা বলছেন, বাংলা থেকেই টাকা উদ্ধারের বিষয়টিও বিশেষ অর্থবহ। কারণ জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে কংগ্রেসের পাশে তৃণমূল রয়েছে। হেমন্ত সোরেনের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই মামলা যত এগোবে, ততই জলঘোলা হবে।
যদিও সরকার ভাঙার চক্রান্ত উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তাঁর বক্তব্য, “যখন ধরা পড়ে যায়, তখন এ টাকা আমার নয় বলতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের টাকা ধরা পড়ার পর বাকি কংগ্রেস এমএলএ-রা টাকা সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। পুলিশের কাছে সেটাই খবর ছিল।”