হাওড়া: শুধু পল্লবী নয়, সাগ্নিক চক্রবর্তী জন্য হাওড়ার জগাছার আরও এক তরুণী আত্মহত্যা করেছিলেন। বুধবার এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সৌমি মণ্ডল নামে এক তরুণীর বাবা-মা। তাঁদের অভিযোগ, সৌমির সঙ্গে সাগ্নিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁদের। সেই সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকেই ৮ বছর আগে সৌমি মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ সৌমির বাবা-মায়ের। মেয়ের আত্মহত্যার জন্য সাগ্নিককে দায়ী করে ২০১৪ সালে জগাছা থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন সৌমির বাবা অজয় কুমার মণ্ডল। কিন্তু পুলিশ তাঁর অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি সৌমির বাবার। তাঁর অভিযোগ, সাগ্নিকের পরিবারের তরফে প্রভাব খাটিয়ে তদন্তে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার পাননি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
বুধবার জগাছার হসপিটাল রোডের বাড়িতে বসে সৌমির মা ইলা মণ্ডল জানালেন, ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ দোলের পরের দিন জগাছার বাড়ি থেকে সৌমির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তখন জগাছার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। পরে তাঁরা হসপিটাল রোডের বাড়িতে আসেন। সৌমি ছিল তাঁদের বড় মেয়ে। মারা যাওয়ার সময় সৌমি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণীতে পড়ত। সৌমির বাবা-মা বলেছেন, “সৌমি যখন সাঁতরাগাছির সেন্ট্রাল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে তখন ওই একই স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়তো সাগ্নিকও। তখন থেকেই সৌমির সঙ্গে আলাপ সাগ্নিকের।“ সাগ্নিক সৌমিদের ওই ভাড়া বাড়িতে তখন নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলেও জানিয়েছেন সৌমির বাবা-মা। সৌমি ও সাগ্নিকের প্রেম শারীরিক সম্পর্কেও গড়ায় বলে জানায় সৌমির পরিবার। সৌমির বাবা জানিয়েছেন, দুপুরবেলা হঠাৎ বাড়ি ফিরে তাঁর মেয়েকে সাগ্নিকের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেও ফেলেছিলেন। ২ বার এ রকম ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য মেয়েকে তিনি বকাবকি এবং মারধরও করেছিলেন। কিন্তু সাগ্নিকের সঙ্গে সৌমির সম্পর্ক হঠাৎই চিড় ধরতে থাকে। আর সেই সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই সৌমি আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। সে সময় সাগ্নিকই আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ সৌমির পরিবারের।
পল্লবীর সঙ্গে সাগ্নিকের সম্পর্কের জটিলতার পিছনে উঠে এসেছিল ঐন্দ্রিলা মুখার্জির নাম। সৌমি-সাগ্নিকের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পিছনেও ঐন্দ্রিলার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সৌমির বাবা-মা। সাগ্নিক যখন সৌমিদের বাড়িতে যাতায়াত করতে, তখন তার সঙ্গে ঐন্দ্রিলাও তাঁদের বাড়িতে আসত বলে জানিয়েছেন সৌমির মা। সৌমির মৃত্যুর পিছনে ঐন্দ্রিলার হাত রয়েছে কি না তাও পুলিশের খতিয়ে দেখা উচিত বলে, দাবি করেন সৌমির বাবা-মা। তাঁদের বক্তব্য, ঐন্দ্রিলার জন্যই সাগ্নিকের সঙ্গে সৌমির সম্পর্কে চিড় ধরে। সৌমির পাশাপাশি পল্লবীর আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তের জন্য তাঁরা পুলিশকে সবরকম সাহায্য করবেন বলেও বুধবার জানিয়েছেন সৌমির বাবা-মা।
ঐন্দ্রিলার বিরুদ্ধে সৌমির পরিবাররের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঐন্দ্রিলার মা লক্ষ্মী মুখার্জি। সৌমির বাড়িতে ঐন্দ্রিলার যাওয়া প্রসঙ্গে ঐন্দ্রিলার মা বলেছেন, “সাগ্নিকের সঙ্গে যখন সৌমির বাড়িতে ঐন্দ্রিলা যেত, তখন তাঁর বয়স ছিল ১১ বছর। বন্ধু হিসেবেই সাগ্নিকের সঙ্গে সৌমির বাড়িতে যেত ঐন্দ্রিলা।” অন্য কোনও উদ্দেশ্য ঐন্দ্রিলার ছিল না বলেই দাবি ঐন্দ্রিলার মায়ের। এ প্রসঙ্গে ঐন্দ্রিলা বলেছেন, “সৌমি, পল্লবী, সাগ্নিক, শ্রাবণী, রেহান- আমরা সকলেই ছোটবেলা থেকে পাড়ার বন্ধু ছিলাম। আমাদের একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।“ কেন তাঁর নাম সবকিছুতে জড়ানো হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না বলেও জানান ঐন্দ্রিলা।
পল্লবী-সাগ্নিকের ফ্ল্যাটে থাকার প্রসঙ্গ বুধবার স্বীকার করেছেন ঐন্দ্রিলা। তিনি জানিয়েছেন, ৩ মে একটি পার্টিতে গভীর রাত পর্যন্ত কাটানোর পর পল্লবীদের গড়ফার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন তিনি। ঐন্দ্রিলা বলেছেন, “গড়ফার ফ্ল্যাটে অতিরিক্ত মদ্যপান করে সাগ্নিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। রক্ত বমি হতে থাকে। সাগ্নিকের অসুস্থতা দেখে আমি পল্লবীর সঙ্গে গড়ফার ফ্ল্যাটে থেকে যায়।“ ঐন্দ্রিলা আরও জানিয়েছেন, ৪ মে সকালবেলা টালিগঞ্জে শুটিং থাকায় পল্লবী সাগ্নিককে দেখার জন্য ঐন্দ্রিলাকে বাড়িতে রেখে যান। ঐন্দ্রিলা সে কারণেই সাগ্নিকের সঙ্গে ছিলেন বলে দাবি করেছেন। সাগ্নিকের বাড়ির পরিচারিকা তাঁর বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ করছেন, সেটা ঠিক নয় বলে জানান ঐন্দ্রিলা।