ধূপগুড়ি: করোনা ভ্যাকসিন (Corona Vaccine) নিতে গিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ৮ ব্যক্তি! প্রশাসনের অদূরদর্শিতায় চরম বিশৃঙ্খলায় টিকা নিতে গিটয়ে পদপিষ্ট হলেন ২৯ জন। যাঁদের মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি জেলার নতুন ব্লক বানারহাটের তিনটি টিকা কেন্দ্রে।
এদিন করোনা টিকা নিতে জলপাইগুড়ি জেলার নতুন ব্লক বানারহাটের শালবাড়ি ১, শালবাড়ি ২ এবং সাকোয়াঝোরা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে টিকা কেন্দ্রের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকটি টিকাকেন্দ্রে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরামারিতে। সব মিলিয়ে প্রবল হুড়োহুড়িতে পদস্পিষ্ট হন মোট ২৯ জন। এঁদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর। আহতদের দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মাঝেই সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন এক পুলিশ অফিসার।
শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরামারির একটা বাজারের মধ্যে অবস্থিত চন্দ্রকান্ত হাইস্কুল। আগের দিনই এলাকায় সকাল থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দুটোই মিলবে। এই ঘোষণা শুনে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পুরুষ-মহিলারা ভিড় করেন শিবিরে। পাশের বনবস্তি চা- বাগান এলাকা থেকেও দলে দলে মানুষ এসে ভিড় জমাতে শুরু করেন টিকাকেন্দ্রের সামনে। বেলা দশটার মধ্যে হাজার দুয়েক মানুষ স্কুলের গেটের বাইরে পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েন টিকার আশায়।
এদিকে স্কুলের গেটের ভেতর হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ কর্মী আর সিভিক ভলান্টিয়ারকে দাঁড় করিয়ে অবস্থার সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এর জেরে তীব্র উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। ভোর থেকে চড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে স্কুলের গেট খোলা না পেয়ে মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার পর বেলা দশটার সময় বানারহাট থানার এএসআই অঞ্জন দে-সহ কয়েকজন এসে স্কুলের গেট খুলতেই হুড়মুড়িয়ে মানুষ ঢুকতে শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে পুলিশ কর্মীরা বাধা দিতে গেলে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। শুরু হয়ে যায় ধ্বস্তাধস্তি। হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে গিয়ে একের পর এক পুরুষ-মহিলা মাটিতে পড়ে যান। অন্যরা তাঁদের মাড়িয়েই টিকা নিতে স্কুলের ভেতরে ছোটেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আহত হন পুলিশ আধিকারিক অঞ্জন কুমার দে নিজেও। এদিকে বেশ কয়েজন মহিলারা তখন শিশু নিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে আছেন। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়। খবর পেয়ে বানারহাট থানার আরও পুলিশ বাহিনী চলে আসে। দুরামারি বাজারের ব্যবসায়ী দের অনেকে ছুটে এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। এদিকে খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভ্যাকসিন নিতে আসা ব্যক্তিদের পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন। তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। দুরামারি চন্দ্র কান্ত হাইস্কুল এলাকা কার্যত রক্তাক্ত হয়ে পড়ে।
আহতদের মধ্যে চারজন বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে, চারজনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত সহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াংডেন ভুটিয়া, ডিএসপি ক্রাইম বিক্রমজিত লামা, অতিরিক্ত জেলা শাসক বিবেক ভাসমি, জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সুদীপ পাল, বানার হাটের বিডিও সকলে দুরামারিতে ছুটে আসেন।
এদিকে পাশের গ্রাম পঞ্চায়েত শালবাড়ি ২-তেও আরেক টিকা শিবিরে ধ্বস্তাধস্তি তিনজন আহত হয়েছেন। সাকোয়াঝোরা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সজনাপাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিবিরেও এক হাজারের বেশি মানুষ ভিড় জমান। উত্তেজনা থামাতে ধূপগুড়ি থানার আইসি সুজয় তুঙ্গা পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির হন। সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করার সময় এক সাংবাদিকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন এক আইসি। এমনকী ভিড় নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে সাংবাদিকের পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি সরকার বলেন, “আমার স্কুলে শিবির করা হবে অথচ আমি জানি না। জানলে কিছু উদ্যোগ নিয়ে সহযোগিতা করা যেত। জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, “কেন এই অবস্থা সৃষ্টি হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আহতদের খোঁজ নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে জানা গিয়েছে। এখানে যে ক্যাম্প হবে সেই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছুই জানতেন না। তবে যারা আহত হয়েছেন তারা সকলেই সুস্থ রয়েছেন।” আরও পড়ুন: ৩ মাস ধরে লাশকাটা ঘরে রাখা দেহ! বিজেপি কর্মীর মেডিক্যাল-নথি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন সিবিআইয়ের