জলপাইগুড়ি: বানারহাট ব্লক গঠনের এক বছর অতিক্রম হতে চললেও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই আটকে নবগঠিত বানারহাট ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের কাজ! সমস্যায় পড়ুয়া থেকে এলাকাবাসী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
ধূপগুড়ি বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ধূপগুড়ি ব্লককে ভাগ করে বানারহাটকে পৃথক ব্লক করার। অবিভক্ত ধূপগুড়ি ব্লক ১৬ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত ছিল। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দোপাধ্যায় ভারত – ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকা এবং চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় মানুষদের কথা ভেবে ধূপগুড়ি ব্লককে দ্বিখন্ডিত করে সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে পৃথক ব্লক গঠনের উদ্যোগ নেয় । বানারহাট পৃথক ব্লকও গঠন হয়। তবে ব্লক গঠন এক বছর অতিক্রম করতে চললেও সেই জায়গায় পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করা যায়নি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই গঠন হচ্ছে না পঞ্চায়েত সমিতি এমনি অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা।
উল্লেখ্য,দীর্ঘদিন ধরেই বানারহাটকে পৃথক ব্লক ঘোষণার জন্য বামেরা আন্দোলন শুরু করলে ও রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পড় সেটা থমকে যায়। পড়ে অবশ্য দল মত নির্বিশেষে এলাকাবাসীর জোরদার আন্দোলনে জেরে চলতিবছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বানারহাট কে পৃথক ব্লক ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও ধূপগুড়ি মহকুমা আদায় সমিতির তরফে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী এবং শাসক বিরোধীদলের নেতাদের সেই বিষয়ে স্মারকলিপি ও দেওয়া হয়।এরপরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বানারহাটকে পৃথক ব্লক ঘোষণা করেন।
এদিকে বানারহাট পৃথক ব্লক ঘোষণার পর সেখানে একজন বিডিও নিয়োগ করা হয়। তবে নব নির্মিত ব্লকের বছর হতে চললেও পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করতে পারেনি এখনও।
যেখানে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বানারহাটকে পৃথক ব্লক গঠন করা হয়েছে এই এলাকার বাসিন্দারাদের সুবিধার্থে একদিকে রয়েছে ভুটান সীমান্ত, চা বাগান বনবস্তি মিলে একটা বিস্তীর্ণ এলাকায় জনজাতির মানুষের বসবাস। সেখানে সাধারণ মানুষকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের জন্যে ছুটে যেতে হচ্ছে ধূপগুড়ি ব্লকে।
যেখানে শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করতে না পারাতেই ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষকে যার ব্যার্থতা বর্তমান শাসক দলের। যদিও সকলেই চাইছেন দ্রুত পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হোক। তবে কি অজানা কারণে আজ পর্যন্ত পঞ্চায়েত সমিতি ঘটন হল না, যা নিয়ে ধন্দে রয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতারা। গোটা ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত, ধূপগুড়ি ব্লকের ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের থেকে সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতে নিয়ে বানারহাট ব্লক গঠন করা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি তৃণমূলের।২১ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের মধ্যে তৃণমূলের রয়েছে ১৫ জন বিজেপির ৬ জন। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বোর্ড গঠন হলে শাসক দলেরই হবে।
তবে ঠিক কি কারণে আজ পর্যন্ত বোর্ড গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না ।তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ বাসিন্দারা। বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিজ্ঞার অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কারণে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করতে পারেনি তৃণমূল, সেই কারণেই ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদিকে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই জানান তৃনমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপের।
বানারহাটের ব্যাবসায়ী সমির দে বলেন, “ব্লক ঘোষণার এক বছর হতে চললেও পঞ্চায়েত সমিতি ঘটনা হয় বহু কাজের জন্য ধূপগুড়ি যেতে হচ্ছে। শাসক দলের নেতৃত্বের কাছে আমার অনুরোধ তাদের মধ্যে কোনও বিপদ রয়েছে কিনা আমার জানা নেই, যদি থাকে সব ভুলে গিয়ে যাতে দ্রুত পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের উদ্যোগ নেয়।”
অপরদিকে, ভারত – ভুটান সীমান্তবর্তী চামূর্চির বাসিন্দা রিংকী প্রধান বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি গঠন না হওয়ার কারণে এখনো আমাদের বিভিন্ন কাজের জন্যে ধূপগুড়ি যেতে হচ্ছে। একে তো গাড়ির সমস্যা রয়েছে, তাই খুব দ্রুত পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করা উচিৎ।”
মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মনোজ টিজ্ঞার কথায়, “বানারহাট ব্লক ঘোষণা হয়েছে এতে সাধারণ মানুষ নিশ্চই উপকৃত হবেন। কিন্তু যেভাবে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল চরমে তাই আজ পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করা হচ্ছে না।” তাঁর সংযোজন, পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করার না হলে যে উদ্দেশ্যে বানারহাটকে ব্লক করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল এর ফলে এখানে সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছে না। আনার বিধানসভার বিন্নাগুড়ি এবং সাঁকোয়াঝোরা-১ দুটো গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।
এদিকে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে কিনা সেটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এগুলো নিয়ে বিজেপির মাথা ঘামানোর দরকার নেই। বিজেপির নিজেদের ঘর ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থা হয়েছে আগামীদিনে জলপাইগুড়ি জেলা থেকে বিজেপি দলটাই উঠে যাচ্ছে। তাদের বিধায়করা ঘরে বসে থাকবে। তাদের কাছে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মজা দেওয়া ছাড়া বিজেপির আর কোনো কাজ নেই। খুব দ্রুত পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করা হবে।শুধু বানারহাট নয় ধূপগুড়ি ও মাল পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করা হবে। ব্লক এবং জেলা স্তরে রেজুলেশন করে রাজ্য স্তর পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে।”
আরও পড়ুন: Photo Gallery: হঠাৎই জ্বলে উঠল চলন্ত গাড়ি! শহরের দুই প্রান্তে ভস্মিভূত বাস ও প্রাইভেট কার…