জলপাইগুড়ি: সন্ধ্যা হলেই কেমন যেন একটা গা ছমছমে ব্যাপার। কাউকে ঠিক সেভাবে দেখা যায় না। কিন্তু গ্রামবাসীদের কথায়, ওদের নাকি অনুভব করা যায়। যত রাত বাড়ে, ততই নাকি বাড়ে সেই আর্তনাদের আওয়াজ, যা শোনা গিয়েছিল দুর্ঘটনার সেই ভোর রাতে! সন্ধ্যার পর ওই এলাকা আর মারাচ্ছেন না কেউ! কিন্তু তাতে কী! রেললাইনের ধার দিয়েও তো রয়েছে অনেক ঝুপড়ি-বস্তি এলাকা! ভূত তো এসে ধরতে পারে তাঁদেরও! উল্কার থেকেও দ্রুত গতিতে দোমহনিতে ছড়িয়েছে এই কুসংস্কার। তাই দোমহনির বাসিন্দারা বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস দুর্ঘনটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় পুজোর আয়োজন করলেন। হল হোম যজ্ঞ-মন্ত্রোপাঠ! দুর্ঘটনাগ্রস্ত বগিগুলির সামনে দাঁড়িয়েই হল নাম সংকীর্তন পাঠ।
চলতি মাসের ১৩ তারিখের ময়নাগুড়ির দোমহনির বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ফিরিয়ে দেয় ২৩ বছর আগে ঘটে যাওয়া সাঁইথিয়ার স্মৃতি। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ইতিমধ্যেই রেলের ট্র্যাক মেরামতি করে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে ওই লাইনে। কিন্তু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারছেন না দোমহনির বাসিন্দারা।
এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে তাঁদের। কানে বাজছে বুক ফাঁটা সেই কান্নার আওয়াজ। তাঁদের মনে হয়, ‘কাউকেই তো দেখছি না, কিন্তু কেউ যেন রয়েছে পাশেই…’। তাঁদের কথায়, এ কেবল অনুভব করা যায়, ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, অপঘাতে মৃত্যু, তাই আত্মারা শান্তি পায়নি এখনও।
এক গ্রামবাসী বলেন, “রেললাইন পার করেই এই গ্রামের লোক ওই গ্রামে যেত। কিন্তু এখন সন্ধ্যার পরই একটা অদ্ভূত কিছু বোঝা যায়। কেউ আর রেললাইন পার হতে চান না। লাইনের ধারের বাড়ির লোকগুলো আর বের হতেও চান না। আগে তো এমন কিছু অনুভব করিনি আমরা। এখন করছি তাই পুজো দিচ্ছি।”
আরেক ব্যক্তির তো সোজাসাপটা কথা, “রেল দুর্ঘটনার পর থেকেই ওরা অত্যাচার করছে। আমরা শুনতে পাই। তাই পুজো দিচ্ছি।” শুক্রবার সকালে ঘটা করে পুজো হয় ওই স্থানে। হয় কীর্তন। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও ভূতের ভয়!
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বস্তি শ্রবণ চৌধুরী আবারও বোঝালেন, “ভূত বলে কিছু হয় না। এটা মানুষের এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা। যেহেতু ওই এলাকায় এক সঙ্গে অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন, তাই এই ধারণা ছড়িয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তিবাদী সংগঠন বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় অবিলম্বে সচেতনতা প্রচার করা উচিত।” না হলে এই ভয়ের শেষ এখানেই নয় বলে মনে করেন তিনি।