ময়নাগুড়ি: কৃষি ঋণ নিয়েছিলেন। তবে শোধ না করায় ময়নাগুড়ির বিজেপি বিজেপি বিধায়ক কৌশিক রায়কে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করে গত মঙ্গলবার ঋণ পরিশোধ করার নোটিশ দেয় ময়নাগুড়ির চুকানী পাড়া সমবায় উন্নয়ন সমিতি। সেই খবর প্রকাশিত হয় সংবাদ মাধ্যমে। বিষয়টি জানাজানি হতেই কার্যত লজ্জায় পড়ে যান বিধায়কের পরিবার। বুধবার দুপুরে ব্যাঙ্কে পৌঁছন বিজেপি বিধায়কের স্ত্রী সোনি রায়। দেখা করেন ম্যানেজারের সঙ্গে। বলেন, “মঙ্গলসূত্র জমা রেখে আমাদের ঋণ পরিশোধ করে নিন।”
বুধবার ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করার পর বিজেপি বিধায়কের স্ত্রী বলেন, “আমাদের কাছে এই মুহূর্তে এত টাকা নেই। কিন্তু ঋণ খেলাপি নোটিশ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় আমরা লজ্জিত।” কীভাবে এই দেওয়া নোটিস ভাইরাল হল তা নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেন। এরপর শুরু হয় ম্যানেজারের সঙ্গে বাক বিতন্ডা।
এরপর বিধায়কের স্ত্রী বলতে থাকেন, “আমি আজই ঋণ শোধ করব।” এই কথা বলে গলা থেকে মঙ্গলসূত্র এবং হাত থেকে সোনার বালা খুলে দিয়ে বলেন, “এই গুলি জমা রেখে আমাদের ঋণ পরিশোধ করে নিন।” পাল্টা ম্যানেজার বলেন, “আমরা সোনা বন্ধক রেখে ঋণ দিই না। আপনি অন্য যায়গায় এর ব্যবস্থা করে আমাদের টাকা দিন।” এরপর ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সঙ্গে বাক বিতন্ডা আরও চরমে ওঠে।
পরে সোনি রায় ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে যান। জানা গেছে এরপর তিনি এক সোনার দোকানে গিয়ে মঙ্গল সূত্র এবং হাতের বালা বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে ফের ব্যাঙ্কে এসে ঋণ পরিশোধ করেন।
সোনি রায় বলেন, “যে সময় আমার স্বামী ঋণ নিয়েছিলেন সেই সময় তিনি স্কুল শিক্ষকের চাকরি পাননি। তিনি কৃষি ঋণ নিয়ে বাঁশের টুকরো কিনে হিমঘরে সাপ্লাই করতেন। মাঝে আমার ছেলের বড় দুর্ঘটনা হয়। আমার ছেলে কোমায় ছিল। ঠাকুরের আশীর্বাদে সে বর্তমানে সুস্থ। বিভিন্ন ঝড় গিয়েছে আমাদের উপর দিয়ে। সেই কারণেই আমরা এতদিন ঋণ পরিশোধ করে উঠতে পারিনি। এই ব্যাঙ্কে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি ঋণ খেলাপি নোটিশ পেয়েছে। কিন্তু তাদের কারোর নোটিশ ভাইরাল হল না। কেবলমাত্র আমাদের নোটিশ ভাইরাল হল। এর থেকে বোঝা যায় যেহেতু আমার স্বামী একজন বিজেপি দলের বিধায়ক সেই কারণে তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই রাজনৈতিক চক্রান্ত করা হয়েছে। এই ব্যাঙ্ক থেকেই আমাদের নোটিশ ভাইরাল করা হয়েছে। আমি আজ সোনা বন্ধক দিয়ে ঋণ শোধ করলাম।পরে আইনি পদক্ষেপ নেব।”
স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষণ রায় বলেন,”আমাদের বাড়িতেও নোটিশ এসেছে। আমার বাবা কৃষিকাজ করেন। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, আমাদের নোটিশ কিন্তু ভাইরাল হয়নি। তাহলে কেন কৌশিক রায়ের নোটিশ ভাইরাল হল। এটা মোটেও কাম্য নয়।”
ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নিধির মন্ডল বলেন, “বারংবার আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে আমি সত্যি কিছু জানি না। হতে পারে আমাদের অফিস থেকে কেউ এটা ভাইরাল করেছে। আবার নাও হতে পারে। এদিন বিকেলে বিধায়কের স্ত্রী সমস্ত টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। পাঁচ বছরের পুরনো যাদের ঋণ রয়েছে তাঁদেরকে নোটিশ করা হচ্ছে। এরকম প্রায় শতাধিক জন রয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, ময়নাগুড়ির বিজেপি বিধায়ক কৌশিক রায় ২০১০ ময়নাগুড়ির চুকানী পাড়া সমবায় উন্নয়ন সমিতি থেকে ২৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এক টাকাও পরিশোধ না করায় সেই ঋণ বাবদ ৩১ মার্চ ২০২৩ অবধি কেবলমাত্র সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৪৭৫ টাকা। অর্থাৎ সুদে আসলে বর্তমান ঋণের পরিমাণ ৫২হাজার ৪৭৫ টাকা। এই টাকা শোধ না করায় মঙ্গলবার বিধায়ককে নোটিশ দিয়েছিল সমবায় কর্তৃপক্ষ।