জলপাইগুড়ি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের উপকার করা যায় তা আরও একবার করে দেখালেন জলপাইগুড়ির সমাজকর্মী নব্যেন্দু মৌলিক। এর আগে রেলমন্ত্রীকে দু’বার টুইট করে চলন্ত ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়া দুই যাত্রীর চিকিৎসা বন্দোবস্ত করেছিলেন। এবার একই কায়দায় রেলমন্ত্রী অশ্বীনী বৈষ্ণব টুইট করে আটকে দিলেন নারী পাচার।
অভিযোগ, ভালবাসার জালে ফাঁসিয়ে দিল্লি থেকে জলপাইগুড়ি এসেছিল এক যুবক। এরপর বিয়ের টোপ দিয়ে নাবালিকাকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে পাড়ি দেয় দিল্লির পথে। বিষয়টি জানবার পর গভীর রাতে রেলমন্ত্রীকে টুইট করেন সমাজকর্মী নব্যেন্দু মৌলিক। টুইট পেয়ে সঙ্গে-সঙ্গে পদক্ষেপ করেন রেলমন্ত্রী। দ্ধার হয় নাবালিকা।
যেভাবে খবর এল সমাজকর্মীর কাছে
মঙ্গলবার রাত ১১ টা ৩৪ মিনিট নাগাদ হুমাইপুর প্রকাশ ফাউন্ডেশন নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের জলপাইগুড়ি শাখার সম্পাদক নব্যেন্দু মৌলিকের কাছে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকার এক নাবালিকার পরিবার। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন যে, তাঁদের নাবালিকা মেয়ে দিল্লির এক ছেলের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে । দু’জনই ১২৫২৩ নিউ জলপাইগুড়ি- নিউ দিল্লি এক্সপ্রেসে রয়েছে। এই বিষয়ে নাবালিকার পরিবার তারা জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিত ভাবে নিখোঁজের অভিযোগও দায়ের করেছেন। অভিযোগের কাগজ হাতে পেয়েই রেলমন্ত্রীকে টুইট করেন নব্যেন্দু মৌলিক। সঙ্গে-সঙ্গে শুরু হয় পদক্ষেপ। রাতভর রুদ্ধশ্বাস অভিযানে উদ্ধার হয় কিশোরী। ব্যার্থ হয় পাচারকারীর প্রয়াস।
নব্যেন্দু মৌলিক জানান যে, নাবালিকার পরিবার থেকে তাঁকে জানানো হয় তাদের মেয়েকে নিয়ে ওই ছেলেটির সঙ্গে নিউ জলপাইগুড়ি – নিউ দিল্লি এক্সপ্রেস করে যাচ্ছে। তারা বি ওয়ানকোচে রয়েছে। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি বিষয়টির গুরুত্ব বোঝেন। নিশ্চয়ই কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নাবালিকাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাকে পাচার করে দেওয়া হতে পারে। তাই তিনি আর সময় নষ্ট না করে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বীনী বৈষ্ণব এবং রেলসেবাকে টুইট করে ঘটনা জানান।
ঘটনার বিবরণ
সমাজকর্মীর কথায়,”রাত তখন ১১টা ৪৯ মিনিট। এর মধ্যে ধারাবাহিক বিহারের কাটিহার,শোনপুর এবং উত্তরপ্রদেশের বারানসি ডিভিশন এবং পূর্ব মধ্য রেল ও উত্তর পূর্ব রেলকে টুইট করতেই থাকি। দ্রুত রিপ্লায়ের আশায়। এরপর ১২টা ১৫ মিনিটে (বুধবার) উত্তর আসে। ঘটনার বিস্তারিত দিই। কিছুক্ষণ বাদে আরপিএফ (RPF) কাটিহার ডিভিশন থেকে ফোন আসে। গোটা ঘটনা বলি। তাদের জানাই ট্রেন কাটিহার ডিভিশনে নেই। বিহারের হাঁজিপুর পার করেছে। বিষয়টি শোনপুর ডিভিশনকে জানানোর অনুরোধ করি। এরপর আমার কথা মতো তারা তাই করে। কিছুক্ষণ বাদে শোনপুর থেকে ফোন আসে আমার কাছে। ফের তাদের বিস্তারিত জানাই। কিন্তু তারা বলেন, এইমাত্র ট্রেন তাঁদের জুরিশডিকশন পার করে বারানসি ডিভিশনে চলে গিয়েছে। ফের তাদের অনুরোধ করি বারানসি ডিভিশনকে ম্যাসেজ ফরওয়ার্ড করতে। সেই মতো বারানসি থেকে ফোন আসে। তারা বলেন ছাপড়ায় ট্রেন দাঁড় করাবেন। সেই মতো রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ছাপড়ায় ট্রেন দাঁড়ায়। এরপর RPF ট্রেনে মেয়ের হদিশ পায়। কিন্তু মেয়েটি নামতে রাজি হয়নি। উলটে নিজের পরিবার এবং কর্তব্যরত RPF জওয়ানদের হুমকি দিতে থাকে। তাদের নামে নাকি শ্লীলতাহানি কেস দেবে এই বলে হুমকি দেয়। এরপর আরপিএফ কর্মিরা ট্রেনটি ছাপড়া থেকে রওনা করিয়ে দেয়। কিন্তু মেয়েটি ট্রেনেই রয়ে যায়। এরপর আমি তাদের বলি মেয়েটি নাবলিকা। পুলিশ কেস রয়েছে। এরপর তারা নতুন প্ল্যান করে।”
নব্যেন্দুবাবু বলেন, “RPF এবং GRP এর যৌথ অভিযান চালিয়ে রাত ৩ টে নাগাদ নাবালিকা মেয়েকে উদ্ধার করে। এরপর রেল জানায় তাদের কাজ সফল। কিন্তু ওই পাচারকারী পালিয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী চলছে।” এর পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া মেনে কিশোরীকে CWC এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কিশোরী বিহারের ছাপড়া জেলার একটি হোমে রয়েছে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি নিয়ে আসবে। দ্রুত গতিতে এই জাতীয় অসাধ্য সাধনের রেলমন্ত্রী এবং রেল দফতরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।