শিলিগুড়ি: ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) নিশানায় কংগ্রেস। তৃণমূল নেত্রীর দাবি, বিজেপি বিরোধিতায় চুপ সোনিয়া-রাহুলের দল। গত দশ বছরে বিরোধী দল হিসাবে কিছুই করতে পারেনি কংগ্রেস। তাই তাঁকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে। সোমবার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দশ, পনেরো, কুড়ি বছর সময় পেলেও কিছু করেনি কংগ্রেস। দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধিতায় কংগ্রেসের কোনও ভূমিকাই নেই। সে কারণেই বিজেপিকে প্রতিহত করতে তাঁকে ময়দানে অবতীর্ণ হতে হয়েছে।
চারদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে কোচবিহারের দিনহাটায় উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রচারের ফাঁকে সোমবার বিকেলে উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলাপতি ত্রিপাঠীর পরিবারের দুই সদস্য রাজেশপতি ত্রিপাঠী ও ললিতেশপতি ত্রিপাঠীকে নিয়ে শিলিগুড়িতে দলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তৃণমূলে যোগ দেন উত্তর প্রদেশের দুই কংগ্রেস নেতা।
এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দাগেন, “গোয়াতে আজ আমাদের মিটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ত্রিপুরায় আমাদের লোক গেলে মারধর করে। এটাই তো বিজেপির কাজ। এর সঙ্গে কংগ্রেসও রয়েছে। আমি কংগ্রেসকে বলতে চাইব, অনেকটা সময়ই তোমরা পেয়েছ। দশ, কুড়ি বছর ধরে তোমরা কী করেছ? তোমরা কিছু করোনি বলেই তো বিজেপির সঙ্গে লড়তে আমাদেরই বাইরে যেতে হয়েছে। আমরা বাংলায় যদি পারি, তা হলে আমরা ভারতবর্ষেও পারি।”
এর আগে একাধিকবার তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দলের নেতারা বার বার বলেছেন, রাহুল গান্ধীকে সময় দেওয়া হলেও, সেই সময়ের যথাযথ ব্যবহার তিনি করতে পারেননি। সেই সুযোগেই বিজেপি দেশে শক্তি বাড়িয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে তুলে ধরা হয়েছে। এদিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথাই বললেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল সুপ্রিমোর এ ভাবে প্রকাশ্যে কংগ্রেস বিরোধিতায় বিজেপি বিরোধী মহাজোটের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তাতে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সহাবস্থানের সম্ভাবনা একদিকে যেমন ক্ষীণ হচ্ছে। একই ভাবে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে এ কথাও স্পষ্ট, বিজেপি বিরোধিতার মূল প্রতিপক্ষ হিসাবে তৃণমূলই প্রথম সারিতে। একই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের যে অস্তিত্ব, সেটাই কার্যত খারিজ করে দিলেন মমতা।
জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলই যে বিজেপির বিরোধিতা করতে পারে সেই বার্তাও স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে তিনি কতটা পোক্ত জায়গায় তাও স্পষ্ট করে দিলেন, যা আগে কখনও বলতে শোনা যায়নি তৃণমূল সুপ্রিমোকে। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমিও সাতবারের সাংসদ ছিলাম। চার দফায় মন্ত্রিত্ব সামলেছি। খনি, যুব, রেলের মতো মন্ত্রক সামলেছি। আমি প্রতি ভোটে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি।”
যদিও এ নিয়ে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “বিজেপির লাগাতার বিরোধিতা যদি কেউ করে থাকে তা রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধীরাই। সমস্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করলে তা প্রমাণ হয়। ভারতের মানুষ বোঝে, বাংলার মানুষও বুঝতে শুরু করেছে তৃণমূলের বিজেপি বিরোধিতা আসলে রাজনীতির বিরোধিতা। আমাদের লড়াইটা নৈতিক লড়াই। রাজনীতির লড়াইয়ে কম্প্রোমাইজ হতে পারে, নীতির লড়াইয়ে তা হয় না।”
অন্যদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে নেওয়ার লক্ষ্যই বিজেপিকে খুশি করা। অধীর চৌধুরীর দাবি, “চুক্তিটাই তো কংগ্রেসকে দুর্বল করা। বিজেপির ভয় বিরোধীরা একজোট না হয়ে যায়। তা হলে ৬৩ শতাংশ ভোটের মালিক বিরোধীরা। ৩৭ শতাংশ ভোট নিয়ে তো আর মোদীজী ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। তাই বিরোধী জোট যাতে তৈরি না হয় নানা রাজ্যে দালাল রেখেছেন। এ রাজ্যে দালালের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই বিজেপির বিরুদ্ধে না বলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বলছেন।”
আরও পড়ুন: কাটেনি সঙ্কট, এখনও বিপদমুক্ত নন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, জানাল এসএসকেএম