জলপাইগুড়ি: কিছু মাস আগে এই এলাকাতেই টিকাকরণকে (COVID Vaccination) কেন্দ্র করে রীতিমতো পদপিষ্ট হয়ে রক্তারক্তি ঘটনার খবর এসেছিল। ফের কোভিড বিধি অমান্য করে টিকাকরণের প্রক্রিয়া চলতে বিতর্কের কেন্দ্রে ধূপগুড়ি হাসপাতাল। টিকার দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনেকেই। কিন্তু, কোভিড বিধি পালন? নৈব নৈব চ। অন্তত ধূপগুড়ি হাসপাতালের ছবি বলছে তাই।
সোমবার সকালে দেখা যায় কাঠফাটা রোদে হাসপাতালের সামনে দীর্ঘ লাইন। করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিতে ভোর ৪টে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে মাঝ বয়সী, যুবক-যুবতীরাও। টিকা নিতে এসে সামাজিক দূরত্ববিধি তো দূরে থাক, তিল ধারণের জায়গাটুকুও নেই। কারোর মুখেও নেই মাস্ক। অরক্ষিত সেই মুখগুলো রীতিমতো ভয় ধরাতে বাধ্য। এরইমধ্য়ে চলছে টীকাকরণ। প্রশ্নের মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
কেন মাস্ক পরতে অনীহা? প্রশ্ন করতেই নানা মুনির নানা মত! কেউ বলছেন, “মাস্ক পরলেই দমবন্ধ লাগে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়”। কেউ বলছেন, “অনেকক্ষণ ভিড়ে দাঁড়িয়ে হাঁফিয়ে গিয়েছি। তাই খুলে পকেটে রেখেছি।” কেউ বা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি মুখে চাপা দিয়েছেন রুমাল বা ওড়না। কেউ বা এড়িয়ে গিয়েছেন সম্পূর্ণ।
পুজোর পর থেকেই ক্রমে রাজ্য ঊর্ধ্বমুখী করোনা গ্রাফ। একাধিক জায়গায় জারি হয়েছে কনটেইনমেন্ট জ়োন। ফিরে এসেছে রাতের বিধিনিষেধ। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায় কোভিড বিধি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। সমস্ত জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তারপরেও কী কোভিড বিধি ভঙ্গ করেই টিকা নিচ্ছেন মানুষ?
শুধু তাই নয়, মাত্র কয়েক মাস আগেই টিকাকরণ নিয়ে রীতিমতো রক্তারক্তি কাণ্ডের সাক্ষী ছিল ধূপগুড়ি। টিকা নিতে এসে পদপিষ্ট হয়েছিলেন প্রায় ২৫ জন। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় ৮ জন। তাঁদের মহিলা ও শিশুও ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন পুলিশ আধিকারিকরাও।
সেবার, পদপিষ্ট ও টিকাপ্রদানের ঘটনায় মূলত সামনে এসেছিল পরিকাঠোমাগত সমস্যা ও ও যোগাযোগের অভাব। সেবার টিকাকেন্দ্রে টিকা নিতে আসেন একাধিক মানুষ। ভোর থেকেই লাইন দিয়েছিলেন টিকাপ্রাপকেরা। তাঁরা কেবল জানতেন টিকা দেওয়া হবে। টিকার দুটি ডোজ় দেওয়া হতে পারে এমন খবরও পেয়েছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু, ক’জন টিকা পাবেন, কত পরিমাণ টিকা দেওয়া হবে, এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারেই ছিলেন সকলে। ধুপগুড়ির জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল, দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাই স্কুলে যে টিকাকরণের শিবির চলছিল বা এইধরনের কোনও পরিকল্পনা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে তা জানতেন না খোদ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক। এমনকী, চন্দ্রকান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকও ছিলেন সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছনোর আগেই চলে গিয়েছিলেন আমজনতা। পরে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরে জানা গিয়েছিল, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের অপরিণামদর্শী নির্দেশই এই বিশৃঙ্খলার নেপথ্য কারণ। এই পরিস্থিতিতে ফের ধুপগুড়ি শহরে সরকারি হাসপাতাল চত্বরে এমন ছবি ধরা পড়াতে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও, এ প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: Gariahat Double Murder: খুনের আগে ৩ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন ভিকি, সঙ্গে ধার করেছিলেন টাকাও!