Durga Puja 2021: তোতাপাড়া বনবস্তিতে মহিষাসুরমর্দিনী হয়ে যান বনদুর্গা, এ এক অন্য প্রাণের পুজো

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Oct 10, 2021 | 6:56 PM

Dooars: শুধু তোতাপাড়া নয়, জঙ্গলের রাভা বস্তি, খুংলুং বস্তির বাসিন্দারাও সামিল হন এই পুজোয়। পুজোর ক’দিন বাসিন্দারা মণ্ডপেই পড়ে থাকেন।

Durga Puja 2021: তোতাপাড়া বনবস্তিতে মহিষাসুরমর্দিনী হয়ে যান বনদুর্গা, এ এক অন্য প্রাণের পুজো
এই ঘরের ভিতরই পূজিতা হন বনদুর্গা। নিজস্ব চিত্র।

Follow Us

ধূপগুড়ি: লকডাউন আর মহামারীর থাবা এবার বনদুর্গা পুজোতে (Durga Pujo)। ডুয়ার্সের (Dooars) মরাঘাট রেঞ্জের অন্তর্গত তোতাপাড়া জঙ্গলের বুক চিড়ে চলে যাওয়া রাস্তা ধরে প্রায় ৮ কিলোমিটার জঙ্গলের পথ পেরিয়ে যেতে হয় তোতাপাড়া বনবস্তিতে। আর সেখানেই দেবী দুর্গা পূজিত হয় বনদুর্গা রূপে।

শুরু থেকেই জাঁকজমকপূর্ণ পুজো হয় এই তোতাপাড়া বনবস্তিতে। পুজোর দিনগুলোয় মেলা বসে। পুজোর চারটে দিন চুটিয়ে আনন্দ এখানকার মানুষের। সারাদিন হই হই। কিন্তু গত বছর থেকেই করোনার থাবায় জৌলুস হারাতে বসেছে বনবস্তির পুজো।

এমনিতে তোতাপাড়া বস্তির বাসিন্দাদের দারিদ্রতা তো রয়েছেই। বেঁচে থাকার জন্য প্রতি নিয়ত জীবনযুদ্ধ মানুষগুলোর। দিনের আলোয় হাড় ভাঙা খাটুনি আর রাতে বন্য হাতিদের হামলার আতঙ্ক। এর পরেও সব অভাব, দুঃখকে ম্লান করে পুজোয় আনন্দে মেতে ওঠেন বনবস্তির বাসিন্দারা। শরতের আকাশে দাঁড়িয়ে আছে চির সবুজ শাল-সেগুন-মেহগনির দল। শহুরে রোশনাই থেকে অনেক দূরে জঙ্গলে ঘেরা মরাঘাট রেঞ্জের তোতাপাড়া বনবস্তিতে শরৎসুন্দরীরও উজাড় করা রূপ।

ডুয়ার্সের গয়েরকাটা থেকে নাথুয়াহাট রাস্তায় খট্টিমারি বিট অফিস। সেখান থেকে ডান দিকে ঘন জঙ্গল চিরে যাওয়া কাঁচা রাস্তা ধরে যেতে হয় তোতাপাড়া বিট অফিস। সেই অফিসের কিছুটা দূরেই দুর্গা মন্দির। এখানেই পুজো হয় প্রতি বছর। পুজোটা হয় বনবস্তির বাসিন্দাদের অন্তরের ভালবাসা আর সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে। হয়তো এমনও হয়, সব ঘরে নতুন পোশাক কেনা সম্ভব হয় না। কিন্তু আনন্দে তাতে কোনও ভাটা পড়ে না। রীতা রাভা, বুধুয়া ওরকো, রিমা ওরাঁওরা কচি-কাচাদের নিয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই জড়ো হন মন্দিরে।

তবে করোনার অতিমারির কারণে এবং আর্থিক সমস্যায় গত দু’বছর যাবৎ এই পুজোকে কেন্দ্র করে আর মেলা বসে না। নেই আগের মতো সেই জৌলুসও। পুজো করাটাও কষ্টকর হয়ে উঠছে। প্রায় ১৪ বছর আগে তৎকালীন বনাধিকারিক কল্যাণ দাসের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই বন দুর্গাপুজো। তারপর থেকে হয়ে প্রতি বছরই পুজো হয়।

বনবস্তির এই দুর্গাপুজোই সব বস্তিবাসীর কাছে। শহরে পুজো দেখতে যাওয়ার উপায় এখানকার মানুষের নেই। কারণ, তোতাপাড়া বনবস্তি থেকে গয়েরকাটা শহরের দূরত্ব প্রায় কম করে ২০ কিলোমিটার। অন্য দিকে ধূপগুড়ি শহরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। তার মধ্যে রাস্তায় বন্যপ্রাণীর হামলার আতঙ্ক রয়েছে। তাই আর শহরমুখো হন না কেউ। সকলে বনবস্তিতে আয়োজিত বনদুর্গা পুজোতে শামিল হন, আনন্দ করেন।

রিমা ওরাঁওয়ের কথায়, “পুজো করতে কত খরচ হবে আমরা আগে থেকেই বসে ঠিক করে নিই। নাচ-গানের জন্য ধামসা-মাদল মণ্ডপে রাখা থাকে ষষ্ঠীর দিন থেকেই। এর আগে বনাধিকারিক ও মন্ত্রীরা এসে এই পুজোয় ধামসা- মাদলের তালে নেচে গিয়েছেন। এবারও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আধিকারিকদের। এবার পুজো ১৪ বছরে পড়ল।”

বন্যপ্রাণ কমিটির সান্মানিক সদস্য সীমা চৌধুরী বলেন, “বন দুর্গাপুজো বনবস্তির মানুষের কাছে খুব কাছের একটা উৎসব। শহরের পুজোয় থাকলেও আমি বনবস্তির পুজোয় ঠিক চলে যাই। বাসিন্দাদের যে আদর-আপ্যায়ণ ও সারল্য তা তো শহরের সব পুজোয় পাই না। তোতাপাড়া বনবস্তির পুজোমণ্ডপে গেলে মনে হয় ছোটবেলার পুজো দেখার স্মৃতি জেগে উঠছে।”

শুধু তোতাপাড়া নয়, জঙ্গলের রাভা বস্তি, খুংলুং বস্তির বাসিন্দারাও সামিল হন এই পুজোয়। পুজোর ক’দিন বাসিন্দারা মণ্ডপেই পড়ে থাকেন। চলে নাচ-গান। দু’বেলাই চলে প্রসাদ খাওয়া। মন্দিরের পাশেই বসে ছোট মেলা।

মরাঘাট জঙ্গলের অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর অফ ফরেস্ট বিপাশা পারুল বলেন, “এ বছর মেলা বসছে না। কারণ করোনা বিধি। আর করোনার কারণেই ছোট করে পুজোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। জঙ্গলে ঘেরা বনবস্তির মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে দুর্গাপুজোর জন্য। শহরের পরিবেশ থেকে দূরে ধামসা-মাদলে পুজোর সূচনা হয়। বনবস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে আমরা বনকর্মিরাও জুড়ে থাকি।”

আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: এ পুজোয় জ্বলে না বিদ্যুতের আলো, মায়ের আনন উদ্ভাসিত প্রদীপ শিখায়

Next Article