জলপাইগুড়ি: আমনা, মতিরানি, চম্পা, ফাল্গুনি, রাজা, বর্ষণ, যুবরাজ… আরও কত কী নাম… ওরা সবাই বিশ্বকর্মার ‘বাহন’। আজ বিশ্বকর্মা পুজো। তাই ওদের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত তো রাখতেই হয়। হলও তাই। মহা ধুমধামে হল হাতি পুজো। পুজোয় সামিল হলেন বনকর্মী থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরা। এমনকী এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকরাও সামিল হলেন হাতি পুজোয়। ডুয়ার্সের গরুমারা ও জলদাপাড়া এলাকায় যে কুনকি হাতি রয়েছে, তাদের আজ পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। পুজো দেওয়া হয় গরুমারা, ধুপঝোরা, মেদলা ক্যাম্প, টন্ডু ক্যাম্পেও।
শনিবার ডুয়ার্সে একটু আলাদাভাবেই পালিত হল বিশ্বকর্মা পুজো। কোনও মূর্তি বা প্রতিমা পুজো নয়, বিশ্বকর্মার বাহন হাতিদের পুজো করা হয় এদিন। গরুমারা এলাকার ২৫ টি কুনকি হাতিকে (পোষ্য হাতি) এদিন পুজো দেওয়া হল। এর পাশাপাশি জলদাপাড়া এলাকাতেও ৩৯ টি কুনকি হাতিকে পুজো দেওযা হয়। পুজোয় সামিল হয়েছিলেন বনকর্মীদের পাশাপাশি বনবস্তি এলাকার গ্রামবাসীরাও। তাঁদের প্রার্থনা, ডুয়ার্সে হাতি-মানুষের সংঘাত যেন কমে যায়। হাতির কারণে গ্রামে ফসল যেন নষ্ট না হয়, সেই প্রার্থনাও করলেন তাঁরা।
এদিন সকাল সকাল মূর্তি নদীতে ভাল করে স্নান করানো হয় হাতিদের। তারপর তাদের রং-বেরঙের খড়িমাটি দিয়ে সাজানো হয়। প্রত্যেক হাতির গায়ে তাদের নামও লেখা হয় খড়িমাটি দিয়ে। তারপর সেখান থেকে শঙ্খ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিতে দিতে হাতিদের পুজো মণ্ডপে নিয়ে আসেন গ্রামের মহিলারা। সব নিয়ম নিষ্ঠা মেনে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো করেন পুরোহিত। অঞ্জলি দেন মহিলারা। এরপর হাতিদের ভাল খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। যে পর্যটকরা সেখানে এসেছিলেন, তাঁরাও কলা, আপেল সহ বিভিন্ন ফল নিজের হাতে খাইয়ে দেন হাতিদের। শেষে পর্যটক ও গ্রামবাসীরা একসঙ্গে বসে মধ্যাহ্নভোজও সারেন।
এক পর্যটক বলেন, “আমরা খুবি আনন্দিত। এই ভাবে হাতি পুজো একদম ব্যাতিক্রমী। সব জায়গায় তো হয় না। আমরাও সকাল থেকে উপোস করে পুজোতে অংশ নিয়েছি। দারুন লাগল পুজোতে অংশ নিয়ে।”
দার্জিলিং ডিভিশনের রেঞ্জার রাজকুমার লায়েক বলেন, “আমরা প্রতি বছর এই দিনটিতে আমাদের কুনকি হাতিদের সাজিয়ে পুজো করে থাকি। কারণ বিশ্বকর্মার বাহন হিসাবেই পুজিত হয় হাতি। জলপাইগুড়ি ডিভিশনের গরুমারা জাতীয় উদ্যানের অধীনে ১৯ টি হাতিকে পুজো দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পর্যটকরাও এতে অংশ নেন।”