Jalpaiguri : ‘স্কুলগুলির মান নিম্নগামী’, শিক্ষকদের ‘ব্যবসা’কে দুষলেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Jul 05, 2022 | 8:47 PM

Jalpaiguri : স্কুলশিক্ষকদের সমালোচনা করে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, "আমরা যখন শিক্ষকতা করতাম তখন মাইনে ছিল মাত্র ৬২ টাকা। সেই সময় আমরা কিন্তু মনোযোগ দিয়ে স্কুল করেছি।"

Jalpaiguri : স্কুলগুলির মান নিম্নগামী, শিক্ষকদের ব্যবসাকে দুষলেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক
প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী

Follow Us

জলপাইগুড়ি : শিক্ষকদের একাংশ স্কুলে না এসে ব্যবসা সামলাতে ব্যস্ত। ফলে স্কুলগুলির মান নিম্নগামী। স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী। আজ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই ভাবে তোপ দাগলেন ময়নাগুড়ি বিধানসভার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা ময়নাগুড়ি পৌরসভার চেয়ারম্যান। প্রাক্তন বিধায়কের এই মন্তব্যে জোর গুঞ্জন ছড়িয়েছে শিক্ষক মহলে।

সোমবার ময়নাগুড়ি বিডিও অফিসে এসআই কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের দ্বারোদঘাটন অনুষ্ঠান ছিল। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অনন্তদেব অধিকারী বলেন, “সরকার বা সরকার পোষিত প্রাথমিক স্কুলগুলির একাংশ শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। যার ফলে অন্য পেশা চালাতে গিয়ে বেশিরভাগ সময় স্কুলে আসেন না তাঁরা।”

এখানেই না থেকে তিনি বলেন, “এছাড়াও স্কুলগুলিতে নিয়মিত যান না স্কুল পরিদর্শকেরা। এখন অনলাইনেই সব হয়। ফলে সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার মান নেমে গিয়েছে। যার জেরে রমরমা হচ্ছে প্রাইভেট স্কুলগুলি। তাই স্কুল ইন্সপেক্টরদের উচিত আরও বেশি করে স্কুলগুলিতে নজরদারি করা।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যখন শিক্ষকতা করতাম তখন মাইনে ছিল মাত্র ৬২ টাকা। সেই সময় আমরা কিন্তু মনোযোগ দিয়ে স্কুল করেছি। এখন একজন প্রাথমিক শিক্ষক চাকরিতে যোগদান করেই ৩০ হাজার টাকা মাইনে পান।” এরপর আরও কেন চাহিদা থাকবে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিপিএসসি চেয়ারম্যান লক্ষ্যমোহন রায়, ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিবম রায় বসুনিয়া, ডিআই শ্যামলচন্দ্র রায়। আজ অনন্তদেব অধিকারী যখন কথাগুলি বলছিলেন, তখন উপস্থিত অনেকে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন।

পরিস্থিতি সামলাতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান লক্ষ্যমোহন রায় বলেন, “অনন্তবাবু কোনও অভিযোগ করেননি। শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থার সেকাল এবং একাল তুলে ধরেছেন। এতে আমি কোনও সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি না। উনি যা বলেছেন এটা আমাদের আগামী দিনের পাথেয় হবে।”

ডি আই (প্রাইমারি) শ্যামলচন্দ্র রায় বলেন, “স্কুল পরিদর্শন করা হয় না, এমনটা নয়। আসলে করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। সবে স্কুলগুলি চালু হয়েছে। রাজ্য থেকে স্কুল ভিজিট করার নতুন নির্দেশিকা এসেছে। এখন নতুন করে শিডিউল তৈরি করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সেই তালিকা তৈরি করে সার্কেলগুলিতে পাঠাব স্কুল পরিদর্শনের জন্য।”

প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে শাসকদলকে আক্রমণ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতা শ্যাম প্রসাদ বলেন, “এই পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী দায়ী। কারণ এই দুর্মূল্যের বাজারে মাসে ৩০০০০ টাকা দিয়ে মা, বাবা, বউ, সন্তান নিয়ে সচ্ছল ভাবে সংসার চালানো অসম্ভব। আর কর্মচারীদের ডিএ দিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী। তার উপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষকদের দিয়ে সার্ভে করানোর নামে গ্রামে গঞ্জে তৃণমূল তার দলীয় কাজ করছে। ফলে চুরি-ডাকাতি না করে সংসার চালাতে গিয়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা ব্যবসা করছেন। অনন্তবাবু কাটমানি নেন। তাই তাঁর সংসার চালাতে কোনও অসুবিধা হবে না। মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিক। সব সমস্যা মিটে যাবে।”

অনেকে বলছেন, প্রাক্তন বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী দলে ঠোঁট কাটা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের তালিকা দীর্ঘ। বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রশান্ত কিশোর-সহ একাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তাঁর মন পছন্দ খবর না হওয়ায় সাংবাদিককে চড় মারার অভিযোগ আছে। সম্প্রতি পৌরসভায় পাট্টা বিলি অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর সঙ্গে এক কাউন্সিলরের তুমুল বাদানুবাদ হয়। তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। এবার এই মন্তব্য তৃণমূলকে নতুন ভাবে অস্বস্তিতে ফেলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Next Article