জলপাইগুড়ি: ছোট্টবেলার নেশা, মাঝেমধ্যেই সাবাশি কুড়োতেন পাড়ার দাদা-কাকুদের কাছ থেকে। গত দু’বছরে লকডাউনে ঘরে বসে সেই নেশাকেই ঘষামাজা করেছিলেন। আর তাতেই সেই নেশা যে তাঁকে পৌঁছে দিল বিশ্বের দোরগোড়ায়। শিশ বাজিয়ে মাত্র ৩৯ সেকেন্ডে দেশের জাতীয় সঙ্গীত করে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুললেন জলপাইগুড়ির পল্লব গোস্বামী। জলপাইগুড়ির ৩ নং ঘুমটি সংলগ্ন আনন্দপাড়ার বাসিন্দা পল্লব কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
কোভিড পরিস্থিতিতে প্রায় দুই বছর কলেজ বন্ধ ছিল। বাড়িতে সময় কাটত না সেভাবে। ছোটবেলা থেকেই শিশ বাজানোর প্রতি আকর্ষণ ছিল। বাড়ি বাবা-কাকাদের থেকে তা শিখেছিলেন। ছোট্টবেলায় পাড়ার ‘দাদা’রা যখন শিশ বাজাতেন, কেবল মজা করেই, তা অত্যন্ত ভালো ভালে লক্ষ্য করতেন তিনি। ঠোঁটের কায়দা, ভঙ্গি, ধরন রপ্ত করেছিলেন, করতেন চর্চা। লকডাউনের এই অবসরে সেটাকেই সময় কাটানোর সঙ্গী করে নেন। লাগাতার শিশ বাজিয়ে গান গেয়েছেন পল্লব। তাঁর এই লাগাতার প্রয়াসের ফলে তিনি হাইরেঞ্জ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, ইন্টারন্যাশানাল বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এবং ম্যাজিক বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
পল্লব জলপাইগুড়ির আনন্দ চন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ইতিহাস অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্র দেব বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই গান বাজনার প্রতি শখ ছিল তাঁর। চেয়েছিলেন নিজের জেলার পাশাপাশি দেশের নাম উজ্জ্বল করতে। সম্প্রতি তিনি শিশ ধ্বনির মাধ্যমে মাত্র ৩৯ সেকেন্ডে জাতীয় সঙ্গীত ভিডিয়ো রেকর্ড করেন। এরপর সেই ভিডিয়ো বিভিন্ন জায়গায় পাঠান। সাফল্য যে এভাবে আসবে, তা ভাবেননি তিনিও।
ছেলেবেলার স্বপ্ন যা এতদিনে বাস্তব রূপ পাওয়ায়, খুব খুশি তাঁর পরিবার। পল্লব বলেন, “নিজের জেলার নাম তথা দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পেরে খুব খুশি।” বর্তমানে তিনি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে তাঁর মা বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি, এদিন উচ্ছূলিত কন্ঠে বললেন পল্লব।
পল্লবের বাবা প্রণব বাবু মাথাভাঙ্গার পারডুবির কৃষি ফার্মের এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসার পদে কর্মরত। মা শর্মিলা গোস্বামী গৃহবধূ । ছেলের সাফল্যে গর্বিত প্রণব গোস্বামী। চাকরির সুবাদে তাঁকে কাক ভোরে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। ফিরতে রাত হয়ে যায়। তাই তিনি জানতেনই না তাঁর ছেলের এই অসামান্য প্রতিভার কথা।
কোভিড পরিস্থিতিতে লক ডাউনে গৃহবন্দি থাকতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন ছেলের এই প্রতিভা। এরপর তিনি তাঁকে উৎসাহিত করেন। তিনি চান ছেলে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাক। গিনেস বুকে তাঁর নাম উঠুক।
পল্লব বলেন, “ইচ্ছা একটা ছিল কিছু করে দেখানোর। তবে সেটা অদম্য হয়েছে লকডাউনেই। বাড়িতে বসে সময় কাটত না। শিশ বাজিয়ে গান করতাম অনেক আগে থেকেই। তবে এই ভাবে সাফল্য আসবে, তা আমি সত্যিই ভাবিনি। আমার কাছে এখনও অবিশ্বাস্য। তবে হ্যাঁ, স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এবার এটাকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।”
পল্লবের বাবার কথায়, “কাজ-অফিস নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। লকডাউনে যখন ঘরে থাকা শুরু করলাম, তখনই বুঝলাম আমার ছেলেটার এই গুণ রয়েছে। আমি তো মুগ্ধ হয়ে যাই। ওঁ আরও বড় হোক, এটাই চাই।”