জলপাইগুড়ি: গ্রামে গঞ্জে থাকা প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াবার পাশাপাশি ড্রপ আউটদের স্কুলমুখী করতে নজিরবিহীন উদ্যোগ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। প্রসঙ্গত, সরকার পোষিত প্রাথমিক স্কুলে ড্রপ আউটদের স্কুলমুখী করার পাশাপাশি স্কুলে সামগ্রিকভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে জনসংযোগে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশ পালন করতে এবার বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি হাটে-বাজারে থাকা চায়ের দোকানগুলিতে গিয়েও শিক্ষকেরা নিবিড় জনসংযোগের মাধ্যমে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াবার চেষ্টা করতে দেখা গেল একদল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এই ছবি ধরা পড়ল জলপাইগুড়িতে।
পরিকাঠামোগত সমস্যা, মিড ডে মিলের বেহাল দশা-সহ আরও একাধিক কারণে গত কয়েক বছরে সরকারি বিদ্যালয়গুলির প্রতি ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা হারিয়ে যেতে বসেছিল বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশের। দেখা যাচ্ছিল বেশিরভাগ অভিভাবক তাঁদের সন্তানকে শহরের নামী-দামি সরকারি স্কুলগুলির পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলেও ভর্তি করছিলেন। এরফলে গ্রামের স্কুল গুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছিল। মাঝে আবার আসে করোনা মহামারি। যার জেরে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকে স্কুলগুলি। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে স্কুল গুলি খুললে দেখা যায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা। তাই নতুন প্রজন্মকে স্কুলমুখী করতে নিবিড় জনসংযোগের মাধ্যমে অভিনব উদ্যোগ নিল শিক্ষা দফতর।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহনী গ্রামপঞ্চায়েতের মরিচ বাড়ি গ্রামেই রয়েছে বার্নিশ চড় স্টেট প্ল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা আরও বাড়াতে ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি তারা দোমহনী বাজার এলাকায় থাকা চায়ের দোকান গুলিতে গিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচি চালান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এহেন আবেদনে অভিভাবকদের সাড়া দিতেও দেখা গেছে।
স্কুলের টিচার ইনচার্জ পম্পি আলম বলেন, বর্তমানে জনসংযোগ সংক্রান্ত নির্দেশিকা আসলেও আমরা কিন্তু এই প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকে চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে আমাদের স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমেনি। উল্টে বেড়েছে। স্কুলের প্রাক্তনী বিদ্যাসাগর মল্লিক। তিনি জানালেন, তাঁদের গ্রামের স্কুলে খুব ভাল পঠনপাঠন হয়। এখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার পর বর্তমানে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল বিশ্বাস বলেন, শিক্ষকদের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তারা যদি স্কুল গুলিতে ভালোভাবে পঠন পাঠন প্রক্রিয়া চালিয়ে যান তবে আমরা এত খরচ করে কেনো শহরের স্কুলে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠাব।
ডি আই প্রাইমারি শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, চলতি মাসে আমরা ছাত্র সপ্তাহ পালন করছি। আমাদের শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি স্কুলে মিড ডে মিল, কন্যাশ্রী, স্কলারশিপ-সহ যেই সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলিকে সামনে রেখে অভিভাবকদের মধ্যে নিবিড় জনসংযোগের মাধ্যমে প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। ড্রপ আউটদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনাটাই আসল উদ্দেশ্য।