জলপাইগুড়ি: কাঞ্চনজঙ্ঘা বিপর্যয়ে সিগন্যাল বিভ্রাটের তত্ত্ব আগেই সামনে এসেছে। ঠিক কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে জানা গিয়েছে, পেপার সিগন্যালের নিয়ম মেনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতি সিগন্যালে এক মিনিট দাঁড়ায় মালগাড়িটি। ঘন্টায় তখন ১৫ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। কিন্তু পেছনে থাকা মালগাড়ি যখন পেপার সিগন্যাল পেয়েছিল, লাইন ‘ক্লিয়ার’ রয়েছে ধরেই স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে মালগাড়ি। পরে নিয়ম ভেঙে গতি আরও বাড়ায়।
কারণ পেপার সিগন্যালে চলাচলের নিয়ম দিনে প্রতি সিগন্যালে এক মিনিট ও রাতে প্রতি সিগন্যালে দু’মিনিট দাঁড়াতে হয়। গতি হতে হয় ১৫ কিমি ঘণ্টা। দৃশ্যমানতা কম থাকলে সেই গতি দশ কিমি থাকার কথা। কিন্তু পেপার সিগন্যাল পেয়ে রাঙাপানি থেকে স্বাভাবিক গতিতেই চলতে শুরু করে গতি কমানোর বদলে গতি বাড়িয়ে কাঞ্চনের পেছনে ধাক্কা মারে মালগাড়ি। রাঙাপানি স্টেশন থেকে প্রথম ৫০০ মিটার মাল গাড়ির গতিবেগ ছিল ১০-১৮ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। কিন্তু তারপরই সেই গতিবেগ উঠে যায়, প্রায় ৪৫-৫০ কিমি প্রতি ঘন্টায়। রেলের সিগন্যাল বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাত্র ৫ মিনিটে এই গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিমির উপর তুলে নিতে পারে যেকোনও মালগাড়ি। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ঘটনার দিন থেকে এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, রাঙাপানি স্টেশন থেকে বেরোনোর পর মাত্র সাড়ে তিন মিনিটে মাল গাড়ির গতিবেগ ৫০ কিমি প্রতি ঘন্টায় উঠে যায়। যা সম্পূর্ণ কাগজ সিগন্যাল নিয়মবিরুদ্ধ।
পথে যে কেবিন ছিল, তাঁরা গেট নিয়ন্ত্রন করলেও তাঁদের কাছে ওয়াকিটকি থাকে না। ফলে তাঁরা যদি দেখেও থাকেন, তাঁদের তরফে মালগাড়িকে জানানোর উপায় ছিল না সামনে ট্রেন আছে। তবে তাঁরা রাঙাপানি স্টেশনে জানাতে পারতেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন, কেবিনের সদস্যরা জানিয়েছিলেন কিনা এবং যদি জানিয়ে থাকেন তবে রাঙাপানি স্টেশন তা মালগাড়ির চালককে জানিয়েছিলেন কিনা তা তদন্ত হচ্ছে।
তদন্তে দেখা গিয়েছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালক নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই গাড়ির গতি রেখেছিলেন। কিন্তু সেই নিয়ম মানেননি মাল গাড়ি চালক। তদন্তে লোকো ইন্সপেক্টর এবং গেটম্যানের ভূমিকাও আতশ কাচের তলায়। মূলত মালগাড়ির চালকদের লার্নিং থাকতে হয়। এই মাল গাড়ির চালকের লার্নিং ছিল কিনা, সেটাও তদন্ত সাপেক্ষ। তবে লোকো ইন্সপেক্টররা যে ধরনের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন, তাদের উচিত লার্নিং দেখেই গুরুত্বপূর্ণ লাইনে মাল গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া। সেক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ওই অংশের লোক ইন্সপেক্টর পালন করেছিলেন কিনা সেটাও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে আসতে চলেছে।