জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) সমস্ত রিহ্যাব সেন্টার ভুয়ো। ভুয়ো সেন্টারগুলিকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ জারি করল জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, এই নির্দেশ অমান্য করলে গ্রেফতার করা হবে।
ময়নাগুড়ি শহিদগড় এলাকার বাসিন্দা বছর ষোলোর ময়ূখ গুহর এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’বছর ধরে মোবাইল ফোনে গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল ময়ূখ। গত জুলাই মাসে তাকে জলপাইগুড়ি পান্ডা পাড়ার পরিবর্তন ফাউন্ডেশন নামে একটি রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করেন তার পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ময়ুখের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। হোম কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে তার পরিবার।
এরপরই একের পর এক ভয়ঙ্কর সব তথ্য উঠে আসে ওই রিহ্যাব সেন্টার সম্পর্কে। ছেলের উপর যৌন নির্যাতন করা হত বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে ময়ূখের পরিবার। তাদের দাবি, ছেলের পায়ে বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমনকী পুরুষাঙ্গেও আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। ময়ূখের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে পুলিশের কাছে বিশেষভাবে আবেদনও করেছে পরিবার।
শুধু ময়ূখের পরিবারই নয়, ওই রিহ্যাবের প্রাক্তন এক আবাসিকের গলাতেও শোনা গিয়েছে ওই রিহ্যাব সম্পর্কে নানা অভিযোগ। মারধর, শারীরিক হেনস্তা থেকে মানসিক নির্যাতন, বাদ যেত না কিছুই। প্রাক্তন ওই আবাসিকের অভিযোগ, তাঁদের বন্ধ ঘরে মাথা নীচে পা উপরে করে পেটানো হতো। খেতে দেওয়া হতো না। কিছু বললেই অকথ্য নির্যাতন চালাত এখানকার লোকজন।
পুলিশও তদন্তে জানতে পারে পরিবর্তন ফাউন্ডেশন নামে ওই রিহ্যাবটি গত পাঁচ বছর ধরে কোনও বৈধ নথি ছাড়াই চলছিল। নিয়ম অনুযায়ী কোনও স্থায়ী চিকিত্সক ছিলেন না সেন্টারে। বাইরের চিকিত্সকদের দিয়ে চিকিত্সা করানো হত। অথচ আবাসিকদের বাড়ি থেকে মোটা নিতে নিতে কুন্ঠা করত না কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পরিবর্তন ফাউন্ডেশনের এই চেহারা সামনে আসতেই জলপাইগুড়ির বাকি দুই রিহ্যাব সেন্টারের কাগজপত্র খতিয়ে দেখে পুলিশ। তাদের কর্তৃপক্ষকেও কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলে পুলিশ। এরপরই দেখা যায় সেই সব কাগজে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয় জলপাইগুড়ির বাকি দু’টি হোমকেও শনিবার সকালের মধ্যে ঝাপ বন্ধ করে দিতে হবে। না করলে গ্রেফতারি এড়ানো অসম্ভব।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত বলেন, “জলপাইগুড়িতে যে তিনটি ডিএডিকশন সেন্টার চলছিল তার মধ্যে একটিকে বৃহস্পতিবার রাতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’টি সেন্টারের কর্তৃপক্ষকে আমরা তাদের সেন্টার সংক্রান্ত কাগজ পত্র দেখাতে বলেছিলাম। তারা প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারায় আমরা শনিবার সকালের মধ্যে এই সেন্টারগুলিকে বন্ধ করতে বলে দিয়েছি। নির্দেশ অমান্য করলে গ্রেফতার করা হবে।”
আরও পড়ুন: R G Kar Hospital: কেন অনশন-আন্দোলন, এবার রোগীর আত্মীয়দের বোঝালেন হবু ডাক্তাররা