Ration Scam in WB: এক বাকিবুরে ‘রক্ষে’ নেই, দোসর এবার ‘রায়সাহেব’, কথায় কথায় নাকি চাকরি খান!
Ration Scam in WB: স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে উত্থান শুরু বিমলের। তাঁর পরিবারে রয়েছে তিনটি ব্যবসার লাইসেন্স। তিনি নিজে একজন রেশন ডিলার, তাঁর ছেলে বিপুল রায় কেরোসিন ডিলার। আর তাঁর স্ত্রীর নামে চলে বিস্তীর্ণ এলাকার খাদ্য সরবরাহ।
শিলিগুড়ি: নিয়োগ দুর্নীতির পর এবার শিরোনামে খাদ্য দফতরে কেলেঙ্কারি। মন্ত্রী-আমলা নয়, আসলে নাকি কিছু ব্যবসায়ীর অঙ্গুলিহেলনেই চলত এই দফতর। যে দফতরের ওপর সাধারণ মানুষের পাতের ভাত-রুটির জোগান নির্ভর করে, সেই দফতরের বিরুদ্ধে সামনে আসছে বিস্ফোরক সব অভিযোগ। চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের প্রতিপত্তির কথা এতদিন অনেকেই জেনে গিয়েছেন। আর এবার সামনে এল আরও এক ‘বাকিবুরে’র কথা। নাম বিমল রায়। উত্তরের খাদ্য দফতরের তিনি ‘রায় সাহেব’ বলে পরিচিত। সাহেব শুধু নামে নয়, কাজেকর্মেও নাকি তাঁকে সাহেব বলে মানতেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা। তাঁর কথায় অস্থায়ী কর্মীর চাকরি পর্যন্ত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শিলিগুড়িতে মাটিগাড়ার পাথরঘাটায় বিমল রায়ের অট্টালিকা সম বাড়ি। শোনা যায় এটাই নয়, আরও একাধিক বাড়ি রয়েছে তাঁর। বাড়ির সামনে ট্রাক দাঁড় করানো আছে। তবে সব দরজা বন্ধ। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীকে প্রশ্ন করতে তিনি জানান, মালিক বাড়ি নেই। প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার ভুয়ো রেশন কার্ড বানানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। চা শ্রমিকদের নামে নাকি সে সব ভুয়ো রেশন কার্ড বানিয়ে রেশনের চাল-ডাল তুলতেন বিমল রায়। তারপর চড়া দামে সেগুলো বিক্রি করেই রায়সাহেব ফুলে-ফেঁপে উঠেছিলেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে উত্থান শুরু বিমলের। তাঁর পরিবারে রয়েছে তিনটি ব্যবসার লাইসেন্স। তিনি নিজে একজন রেশন ডিলার, তাঁর ছেলে বিপুল রায় কেরোসিন ডিলার। আর তাঁর স্ত্রীর নামে চলে বিস্তীর্ণ এলাকার খাদ্য সরবরাহ। বাড়ির কাছেই রয়েছে রেশন আর কেরোসিনের দোকান। সাইনবোর্ডে লেখা আছে দিনের কোন সময়ে খোলা হবে সেই দোকান। দুয়ারে রেশন সরবরাহ করারও কথা। কিন্তু এলাকার লোকজন দাবি করেন, সপ্তাহের অর্ধেক দিনই নাকি বন্ধ থাকে সে সব দোকান। মুখ খোলার সাহস পান না এলাকার বাসিন্দারা।
উত্তরবঙ্গের খাদ্য দফতরের আমলারা তাঁকে রায়সাহেব বলেই চেনেন। উত্তরবঙ্গের খাদ্য দফতরে নাকি তিনিই শেষ কথা। যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন বলেই শোনা যায়। খাদ্য দফতরের এক প্রাক্তন অস্থায়ী কর্মীর অভিযোগ, কার্ড বানাতে রাজি না হওয়ায় এই রায়সাহেবের চাপেই চাকরি হারিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও করেছেন সুকুমার বর্মণ নামে ওই ব্যক্তি।
তিনি জানান, ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ হয় তাঁর। পরে ভুয়ো রেশন কার্ড বানানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তিনি রাজি না হওয়ায় চাকরি চলে যায় বলে অভিযোগ। জমির ব্যবসা থেকে শুরু করে নদী থেকে বালি তোলা, বিমল রায় সবেতেই লগ্নি করতেন বিপুল টাকা। কলকাতায় খাদ্য দফতরের অফিসে ছিল তাঁর যাতায়াত। মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও জানতেন অনেকেই। তবে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর সেই রায়সাহেব অন্তরালে। এলাকার লোকজন অন্তত তাই বলছেন। ইডি সূত্রে খবর, বিমল রায়ের ওপরেও রয়েছে কড়া নজর। তাঁর আর্থিক লেনদেনেও নজর দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
বিরোধীরা বলছেন শাসক দলের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন রায়সাহেব। বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এদের সঙ্গে শিলিগুড়ির অনেক তৃণমূল নেতার যোগাযোগ ছিল, এখনও আছে। এদেরই নির্দেশে প্রশাসন চলে। জমির সব দালালদের সঙ্গে এরা যুক্ত। খাবার বিক্রির টাকাই লগ্নি করা হয় জমিতে।” আবার বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলছেন, “বিমল রায় বাম আমলেও প্রভাবশালী ছিলেন, এখনও আছেন।” তবে বিমলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা মানতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূল নেতা বেদব্রত দত্ত স্পষ্ট বলেন, “আমাদের দলের সঙ্গে এদের কোনও সম্পর্ক নেই।”