বানারহাট: চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি, কাজ থেকে নয়। তাই অবসর নিলেও নিয়মিত স্কুলে আসেন। যখন গোটা রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা যখন দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ, শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্নে ওঠে বিভিন্ন জায়গায় সে সময়ই প্রশংসিত হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুল শিক্ষক। বানারহাট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের ভূমিকায় খুশি এলাকাবাসী। ডুয়ার্সের ছোট্ট শহর বানারহাটের মধ্যে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বানারহাট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ২০০৩ সালে যোগদান করেন স্বপনকান্তি রায়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিক্ষককে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। তবে অবসর নিলেও কিন্তু তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন। বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান ছাত্রদের। সেই সঙ্গে স্কুলের যাবতীয় কাজও করেন।
বানারহাট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০২ জন। সরকারিভাবে স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন। তবে একজন পেপার ট্রান্সফারের মাধ্যমে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। বর্তমানে তিন জন শিক্ষক রয়েছেন। তাই প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম থাকায় কিছুটা হলেও সমস্যা হচ্ছিল। তবে স্বপনকান্তি রায়ের সহযোগিতায় সেই অসুবিধা অনেকটাই কমেছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল রাজ্য। এই পরিস্থিতিতেই বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। কোথাও গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তো কোথাও শিক্ষকের অভাবে বন্ধ থাকে ক্লাস। কোথাও আবার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগও ওঠে। সেই পরিস্থিতিতে স্বপনাবাবুর ভূমিকা নজির গড়ছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ভূমিকায় খুশি বর্তমান শিক্ষক এবং স্কুল পরিদর্শক। যেখানে বিভিন্ন স্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুকছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্কুলের টানে, ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসার টানে পড়ানো বজায় রেখেছেন। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন হয়তো স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে অনুমতি নাও দিতে পারেন। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনুরোধ করেন স্বপনবাবুকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার জন্য। আর সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে তার পর দিন থেকেই ফের আগের মতোই বিদ্যালয়ে আসেন তিনি। বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের তিনি এতটাই ভালোবাসেন যে ক্লাসে যাওয়া মাত্রই ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষককে জড়িয়ে ধরে। এখনও আগের মতোই বিদ্যালয়ের গেট খোলা। স্কুল ঘরের দরজা খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে মিড ডে মিলের দেখভাল তিনিই করেন।
স্বপনবাবুর কথায়, “অবসর নেওয়ার পরও বিদ্যালয় পরিদর্শক ও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসার কথা বলেছিলেন। তাছাড়া আমি শিশুদের ভালোবাসি। তাই এখনও নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসি।” স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল বসাক বলেছেন, “২০১৮ সালে অবসর নিয়েছিলেন স্বপনবাবু। কিন্তু তার পরেও লকডাউনের মতো কঠিন সময় স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মিড ডে মিল সচল রাখতে সাহায্য করেছিলেন। তখন তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন অবসর নেওয়ার পরেও। এবং এখনও তিনি প্রতিদিন স্কুলে আসেন। আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় আমরা খুবই খুশি। উনার ব্যতিক্রমী ভূমিকা প্রশংসনীয়।”