জলপাইগুড়ি: সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বনদফতরের নিষেধাজ্ঞাকে আমল না দিয়ে ড্রোন উড়িয়ে চলছিল সিনেমার শুটিং। সেই ড্রোন বাজেয়াপ্ত করেছে বন দফতর। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে কিছুক্ষণের মধ্যেই ড্রোন নামিয়ে দিতে বাধ্য হয় ওই সিনেমার প্রযোজক সংস্থা। শুটিং ইউনিটের কর্মকরতাদের মধ্যে ড্রোন ওড়ানোর ব্যাপারে বেপোরোয়া মনোভাবে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি বন বিভাগের মোরাঘাট বনাঞ্চলের অন্তর্গত খুট্টিমারি বিট এলাকায়। এর আগে টলিউডের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখোমাধ্যায়ও মূর্তিতে শুটিং করতে এসে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। বনাঞ্চলে ড্রোন ওড়ানোর জন্য জরিমানাও দিতে হয়েছিল তাঁকে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল খুট্টিমারিতে। পরিবেশ প্রেমী সংস্থাগুলির দাবি, উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে সিনেমার শুটিং করতে অবশ্যই আসুক, কিন্তু তাদের বনদফরের যে আইন রয়েছে তা মেনে কাজ করা উচিত।
রবিবার মোরাঘাট রেঞ্জের অন্তর্গত বনাঞ্চলে কলকাতার প্রযোজক সংস্থার একটি সিনেমার শুটিং চলছিল। সূত্রের খবর, ‘দিলখুশ’ নামে বাংলা সিনেমার শুটিং চলছিল। ছবির পরিচালক রাহুল মুখার্জি। এই সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় ছিলেন বলিউডের ‘কবির সিং’ সিনেমায় ‘শিবা’ চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা সোহম মজুমদার ও নায়িকার ভূমিকায় রয়েছেন বাংলা সিরিয়াল ‘বোঝে না সে বোঝে না’ খ্যাত মধুমিতা সরকার। এ দিন খুট্টিমারির জঙ্গলে বাইক নিয়ে একটি মুহুর্তের শুটিং করছিলেন সিনেমার অভিনেতা। সেখানেই বনদফতেরর অনুমতি ছাড়াই বনাঞ্চলের মধ্যে ড্রোন ওড়ানো হয়। আর এই ড্রোন ওড়াতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ড্রোন নামানোর জন্য ওই সংস্থাকে চাপ দেয়। চাপের মুখে পড়ে ড্রোন নামিয়ে দেয় ওই সংস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রহমান বলেন, “জঙ্গলের মাঝে ড্রোন উড়িয়ে শুটিং হচ্ছে দেখে স্থানীয়রা প্রযোজক সংস্থাকে আমরা আপত্তি জানায়। বাধ্য হয়ে ড্রোন ক্যামেরা সরিয়ে নেন।”
জঙ্গলে শুটিংয়ের নামে ড্রোন ওড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলি। ডুয়ার্সের পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ‘ন্যাস’-এর সচিব নফসর আলি বলেছেন, “জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে শুটিং করার আগে সমস্ত নিয়ম জেনে কাজ করা উচিত ছিল ওই সংস্থার। জঙ্গলে ড্রোন উড়িয়ে ছবি তোলা হলে জীব জন্তুর নিরাপত্তা নষ্ট হয়। যারা ভুল কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে বনদফতর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।”
এ বিষয়ে মরাঘাট রেঞ্জের রেঞ্জার রাজকুমার পাল বলেন, “মরাঘাট রেঞ্জের অন্তর্গত সিএনজি ৭ কম্পার্টমেন্টে একটি বাংলা সিনেমার শুটিং চলছিল। সেখানে ড্রোন উড়িয়ে একটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছিল, তখন আমাদের কাছে খবর আসে। আমরা ড্রোনটি বাজেয়াপ্ত করেছি। জলপাইগুড়ির বন আধিকারিককে গোটা ঘটনা জানানো হয়েছে। তাঁর নির্দেশে আগামীকাল আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ির ডিএফও বিকাশ ভি বলেন, “খুট্টমারিতে শুটিংয়ের জন্য বনদফতরের পক্ষ থেকে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও ড্রোন ওড়ানোর অভিযোগে ওই ড্রোন ক্যামেরাটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দফতরের আইন অনুযায়ী ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”