ময়নাগুড়ি: একদিনের দুর্গাপুজোয় (Durgapuja) মাতলো তিস্তা পারের মহারাজ ঘাট। বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ীতে শারদোৎসবের পর প্রতি বছরই দেবী দুর্গার এক বিশেষ আরাধনার আয়োজন করা হয়। একাদশীর দিন ময়নাগুড়ির (Maynaguri) ভান্ডানী গ্রামে মা দুর্গা দেবী ভান্ডানী রূপে পূজিতা হন। এরপর হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা। এই লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja) পরের বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) সদর ব্লকের অন্তর্গত পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মহারাজ ঘাটে হয় একদিনের দুর্গাপূজা। এলাকায় এই পুজো মহারাজ ঘাটের দুর্গাপুজা নামে পরিচিত।
কথিত আছে তিস্তা নদীর পারের মহারাজ ঘাট এলাকায় একসময় যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা ভাল ছিল না।ফলে ইচ্ছে থাকলে যখন তখন শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি ফিরতে পারতো না এই এলাকার বিবাহিত মেয়েরা। ফলে দুর্গাপুজোর সময় গ্রামের বিবাহিত মেয়েরা কেউ সহজে বাপের বাড়ি আসতে পারত না। তাঁদের এই কষ্ট দূর করতেই সেই সময়ের স্থানীয় বাসিন্দারা বৈকন্ঠপুরের রাজার অনুমতি নিয়ে এই এলাকায় পুজো মিটলে ফের দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই থেকে এই গ্রামে নিয়ম চালু হয় বিবাহিত বা কর্মসুত্রে বাইরে থাকা মহিলাদের এই একদিনের দুর্গাপুজোয় অবশ্যই আসতে হবে। সেই নিয়ম আজও বহাল রয়েছে।
মন্দিরের পুরোহিত বিষ্ণু চক্রবর্তী বলেন, “গত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। একদিনের দুর্গাপুজো নামেই এই পুজোর খ্যাতি রয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী সঙ্গে তিনটি কালী ঠাকুরের পুজাও একইসঙ্গে করা হয়।” পুজো কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমাদের এই পুজো এবার ১৪১ বছরে পা দিল। এই পুজো আদপে একদিনের হলেও নিয়ম করে গ্রামের সকল মেয়েরা তাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে এখানে চলে আসেন। পুজোর পাশাপাশি এখানে তিনদিন ধরে মেলা বসে। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে সেই মেলায়। এই এলাকার মেয়েদের যাদের বাইরে যাদের বিয়ে হয়েছে বা কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাদের অতি অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হয় এই সময়।”
পুজো শেষেও ফের পুজোর আনন্দে মেতে উঠে খুশি এলাকার মহিলারাও। বাপের বাড়ি আসতে পেরে খুশি তাপসী রায়, বেবি রায়েরা। বছরভর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। পুজো ও মেলা এই দুই মিলিয়ে খুব আনন্দ করেন তাঁরা। তথাকথিত পুজো শেষেও ফের নতুন শাড়ি পরে, নতুন জামা-কাপড় পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার পর ফের হাসিমুখে ফিরে যান শ্বশুরবাড়ি।