Jalpaiguri: ‘আসি-যাই মাইনে পাই’, ছাত্রশূন্য স্কুলে কী করছেন শিক্ষকরা?
Jalpaiguri: স্কুলের সহশিক্ষিকা বিউটি রাউত বলেন, "২০১৩ সালে যখন এখানে যোগ দিয়েছিলাম, তখন ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে স্কুল জমজমাট ছিল। আজ একজন ছাত্রও নেই। মন খারাপ লাগে, কিন্তু কিছু করার নেই।"

জলপাইগুড়ি: স্কুল আছে। শিক্ষকও আছেন। তবে নেই একজনও ছাত্র! বসে বসে বেতন গুনছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির উত্তর বোরাগাড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের চরম দুরবস্থা। যেকোনও সময় স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শিক্ষকরাও বলছেন, এভাবে বসে বেতন নিতে তাঁদের ভাল লাগে না।
ধূপগুড়ি ব্লকের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তর বোরাগাড়ি জুনিয়র হাইস্কুলটি ২০১০ সালে চালু হয়। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও আর একজন শিক্ষিকা রয়েছেন। আছেন একজন শিক্ষাকর্মী। তাঁরা নিয়ম মেনেই স্কুলে আসেন। অফিস ঘরের তালা খোলেন। তবে শ্রেণিকক্ষের তালা খোলার দরকার হয় না। কারণ কোনও পড়ুয়াই আসে না স্কুলে। স্বাভাবিকভাবে মিড ডে মিলের জন্য রান্নাঘরও তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে বেশ কিছুক্ষণ থেকে চলে যান।
স্কুলের সহশিক্ষিকা বিউটি রাউত বলেন, “২০১৩ সালে যখন এখানে যোগ দিয়েছিলাম, তখন ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে স্কুল জমজমাট ছিল। আজ একজন ছাত্রও নেই। মন খারাপ লাগে, কিন্তু কিছু করার নেই।” যদিও দু’জন ছাত্রের নাম স্কুলের রেজিস্টারে রয়েছে। তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য, ওই দুই পড়ুয়াও অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। ফলে কার্যত পুরোপুরি ছাত্রশূন্য এই বিদ্যালয়। মিড-ডে মিলও বন্ধ সেই কারণে।
কিছুদিন আগে পাশের একটি স্কুলে শিক্ষকের অভাবে ছাত্র-ছাত্রী অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। যার কারণে অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই ঘোষপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল। এবার ছাত্রের অভাবে বন্ধ হতে হতে চলেছে উত্তর বোরাগাড়ি জুনিয়র হাইস্কুল।
অভিভাবকদের দাবি, স্কুল চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে জল জমে থাকে। বর্ষায় অবস্থা আরও খারাপ হয়। এই সমস্যার কথা বহুবার জানানো হলেও পৌরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এর পাশাপাশি একাধিক অব্যবস্থা, পড়াশোনার সুস্থ পরিবেশ নিয়ে সন্দেহ, ও ভবিষ্যৎ ভাবনা থেকেই অনেকেই তাঁদের সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
উত্তর বোরাগাড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ বলেন, “এক সময় প্রচুর ছাত্র ছিল স্কুলে। গত বছর থেকে ছাত্র আসা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডিআই এবং স্কুল পরিদর্শককেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। এভাবে বসে বসে বেতন নিতে আমাদেরও খারাপ লাগে।”
উত্তর বোরাগাড়ি স্কুলে পড়ুয়া না থাকা নিয়ে স্কুল পরিদর্শক তাপস দাস বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিক্ষকদের বলা হয়েছে এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা করে ছাত্রদের পুনরায় স্কুলে ফেরানোর জন্য। যদি তাতেও কাজ না হয়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা হবে।”
গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল এই স্কুল। অথচ আজ সেখানে শুধুই নীরবতা, খালি বেঞ্চ আর তালাবন্ধ দরজা। প্রশাসনের দৃষ্টি কবে পড়বে এই নির্জন শিক্ষাঙ্গণে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকাবাসীর মনে।

