বানারহাট (জলপাইগুড়ি): বিশেষভাবে সক্ষম এবং তাঁর পরিবাররে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। গোটা ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। জলপাইগুড়ির বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটার ঘটনা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় একফালি সরকারি জমি নিয়ে দখল নিয়ে। জানা গিয়েছে, গয়েরকাটার শুকরহাটি এলাকায় একফালি সরকারি জমি নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিবাদ চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
অভিযোগ, সুমিত শিকদার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁর দলবল নিয়ে একপক্ষকে মদত দিচ্ছেন। এই সুমিত শিকদার এলাকায় স্বঘোষিত তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এর আগেও কাটমানি সহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, ওই একফালি সরকারি জমি মনোরঞ্জন ঠাকুর এবং তার এক প্রতিবেশী, দুজনেই ব্যবহার করেন। অভিযোগ, বর্তমানে সেই প্রতিবেশী জমিটি ঘিরে দিয়ে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছেন। জমিটি ঘিরে দিলে মনোরঞ্জন বাবুর বাড়িতে ঢোকার প্রধান রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এই জমি দখলে ওই প্রতিবেশীকে সাহায্য করছেন সুমিত শিকদার এবং তাঁর দলবল বলে এমনটাই অভিযোগ ।
এর আগেও এই নিয়ে একাধিকবার ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছিলেন। ঠিক হয়েছিল ওই জমি কোনও ভাবেই ঘেরা দেওয়া যাবে না। দুই প্রতিবেশীই ব্যবহার করতে পারবে ওই জমি। এরপরও শুক্রবার ফের অশান্তি শুরু হয়।
অভিযোগ, সুমিত শিকদারের উপস্থিতিতে পাকা খুটি পুতে, টিনের বেড়া দিয়ে জমি ঘিরে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যেখানে এলাকার স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পুলিশ প্রশাসন জেলা পরিষদের কর্মীরা গিয়ে জানিয়েছেন যে কোনও ভাবেই সরকারি জমি ঘেরা যাবে না । এরপরও সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে খুঁটি পুতে টিন দিয়ে ঘেরা চালু হয় বলেই অভিযোগ।
মনোরঞ্জবাবু এবং কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবাদও করেন। তাদের প্রশ্ন, যেখানে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা মিমাংসা করে গিয়েছেন,সেখানে কেন অন্যরা মাতব্বরী করছে?
এ দিন, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে যান বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা চৌধুরী, বিন্নাগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশ। টিনের বেড়া, পাকা খুঁটি তুলে ফেলা হয়। আর যাতে বেড়া দেওয়া না হয়,সেই নির্দেশও দেওয়া হয়।
অভিযোগ, এই ঘটনার পর সুমিত শিকদার মনোরঞ্জন ঠাকুর ও তার পরিবারকে হুমকি দেয়। শনিবার রাতে বিন্নাগুড়ি ফাঁড়িতে সুমিত শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মনোরঞ্জন বাবু।
মনোরঞ্জন কুমার ঠাকুরের অভিযোগ, ‘সুমিতের লোক মুন্না খাঁটি জায়গাটায় প্রথমে ফুলগাছ লাগিয়ে দিয়েছিল। পরে বলে সে জায়গা দখল করেছে। আর আমাকে কোনও জায়গাই দিল না। এরপর পঞ্চায়েতকে ডেকে মাপামাপী করানো হলে আমাদের দু’জনকেই সমান ভাগ করে দেওয়া হয়। এরপর সুমিত শিকদার এসে আমাকে বোঝায় যে এইভাবে হবে না। আমি ওই জায়গা নাকি পাব না। তবে সে তো পঞ্চায়েত না। আমায় পঞ্চায়েত যেভাবে বলে গেছে সেই ভাবেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। এখন দেখি সুমিত লোক লাগিয়ে ওদের সাপোর্ট দিচ্ছে। আর আমাকে ধমকি দিচ্ছে। পুলিশ এসে বুঝিয়ে গেলেও সে বোঝে না। উল্টে বলছে কে আসবে আমি দেখে নেব। আমি সুমিত শিকদারের নামে এফআইআর করেছি।’
যদিও এবিষয়ে,মুন্না খাটি ও সুমিত শিকদারকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা কোনও প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনা প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির সম্পাদক শ্যাম প্রসাদ বলেন, ‘দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ ছিল সরকারি একটি জায়গা নিয়ে। এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, জেলা পরিষদের কর্মচারীরা গিয়ে মীমাংসা করেও দিয়ে আসে। দু পক্ষই সে জায়গার ব্যাবহার করতে পারবে। সেই জায়গায় স্বঘোষিত একজন তৃণমূল নেতা এক পক্ষের হয়ে গিয়ে আরেক পক্ষকে হুমকি দিচ্ছে প্রাণনাসের। আর যাকে হুমকি দিচ্ছে সে বিকলাঙ্গ। আসলে স্বঘোষিত তৃণমূল নেতা সেখানে স্বার্থ আছে। ও লাভও আছে। এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এর আগেও কাটমানির অভিযোগ আছে। এসব সমস্যার সমাধানের একটি উপায় এই সমস্ত নেতাদেরকে ধরে জেলে ঢোকাতে হবে। তা না হলে পুরো সব জায়গায় গিয়ে এরকম করে অত্যাচার করবে এবং বিকলাঙ্গ মানুষ যারা আছেন তারাও এদের থেকে পার পাবেন না।’
গয়েরকাটার সিপিএম নেতা বিরাজ সরকার বলেন, ‘জমিটা বিতর্কিত। সেটা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য একটি সুষ্ঠু বিচার করে বলেই আমি জানি। এই প্রভাবশালী নেতা কিছুদিন আগে জলের ট্যাংক উঠিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তোলাবাজি করছে।আরও জায়গায় গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে। প্রতিবন্ধী নীরহ মানুষকে ধমকি দিয়ে হয়রানি করছে।’ অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।