জলপাইগুড়ি: অজানা জ্বরে ব্যাপক হারে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার কারণ বড়রা। তাঁদের থেকেই ছড়াচ্ছে আরএসভি (Respiratory syncytial virus) ভাইরাস। সেই ভাইরাসের জেরেই এত ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাচ্চারা, এমনটাই এ বার দাবি করলেন জেলার বিশেষ জনস্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিত্সক সুশান্ত রায়। শুক্রবারই, জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও শিলিগুড়ি হাসপাতালে যান রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের চার সদস্যের বিশেষ প্রতিনিধি দল। এদিন, উত্তরবঙ্গের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা একটি বৈঠকও করেন। সেই বৈঠকের পরেই সুশান্ত রায় জানিয়েছিলেন বাচ্চাদের জ্বর নিয়ে বিশেষ চিন্তার কোনও কারণ নেই। এ বার স্পষ্টই জানালেন, বড়দের থেকেই মূলত শিশুরা সংক্রমিত হচ্ছে।
বিশেষ জনস্বাস্থ্য আধিকারিক সুশান্ত রায় এদিন বলেন, “করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই অল্প সংখ্যক কিছু শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তারা ঠিক কী কারণে আক্রান্ত হচ্ছে তারই নমুনা পরীক্ষা করতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়েছিল। এখানে সবচেয়ে বেশি সদ্যোজাত থেকে তিন বছর বয়সী শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাত্ যাদের মেটাবলিজম ও অনাক্রম্যতা এখনও সেভাবে তৈরি হয়নি। মূলত বড়দের থেকেই এই সংক্রমণ। আরএসভি ভাইরাসের জন্য বাচ্চাদের ধূম জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এই ভাইরাসের কবলে পড়ছেন মাঝবয়সী থেকে বৃদ্ধরাও। তাঁদের থেকেই মূলত আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তবে ভয়ের কিছু নেই। পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য।”
এদিন, সুশান্তবাবু আরও বলেন, “আজ স্বাস্থ্যভবনের পক্ষ থেকে আধিকারিকরা আসেন। তাঁরা সমস্ত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। জ্বর রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে তা নিয়েই মূলত আলোচনা ছিল। পরিকাঠামো আর কী কী ভাবে জোরদার করা যায়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বেড যাতে বাড়ানো যায় সেটাও দেখা হচ্ছে।”
সূত্রের খবর, চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন, চিকিত্সক পল্লব ভট্টাচার্য, চিকিত্সক বিকাশ মণ্ডল, মাইক্রোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক রাজা রায়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দীপ্তকান্তি মুখোপাধ্যায়, পেডিয়াট্রিস্ট ড. মিহির সরকার। চার সদস্যের এই প্রতিনিধিদল এদিন সমস্ত হাসপাতাল ঘুরে দেখেন। কথা বলেন আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে। যদিও, বিশেষ জনস্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিত্সক সুশান্ত রায় জানিয়েছেন, জ্বর নিয়ে বিশেষ আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই আরএসভি ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ধরা পড়েছে।
জ্বরের সংক্রমণ (Mysterious Fever) একটু হলেও কমেছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ৬৭ শিশু ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে জ্বরের উপসর্গ রয়েছে ১৫ শিশুর। তবে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ৬৫ শিশু ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি, এটি অজানা জ্বর নয়, আরএস ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে শিশুদের।
উত্তরবঙ্গ জুড়ে জ্বর বাড়তেই বিভিন্ন জেলা থেকে নমুনা আসছে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ভিআরডিএল এ। কিন্তু সেখানে আরএস ভাইরাস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। ফলে পরিস্থিতি সামলাতে বাকি পরীক্ষার পাশাপাশি এই ভাইরাস চিহ্নিতকরণ পরীক্ষা শুরু কররে রাজ্যের অনুমোদন চেয়েছে ভিআরডিএল।
এদিকে, বৃহস্পতিবারই শিলিগুড়িতে জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হল বেশ কয়েকটি শিশু। এই মুহুর্তে জেলা হাসপাতালে ৮৪ জন শিশুর চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৫ শিশু। নতুন করে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে শিলিগুড়ি-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাচ্চাদের ভিড় বাড়ছে সেখানেও। গুরুতর অসুস্থ না হলে কাউকেই ভর্তি নেওয়া হবে না বলে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৯২। গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩১ জন শিশু। চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ২৬ জনকে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ৫জনকে। শিশুদের প্রত্যেকটি উপসর্গ নিয়ে চিকিত্সকরা সচেতন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি নার্সিংহোম গুলিতেও ভিড় উপচে পড়ছে। প্রাক্তন সরকারি হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সুবল দত্ত বলেন, “প্রচন্ড ছোঁয়াচে ভাইরাস। আমরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। পুষ্টির অভাবে থাকলে জ্বরে আক্রান্ত বাচ্চাদের অর্গান ফেলিওর হচ্ছে। দ্রুত কমছে প্লেটলেট। আমরা চিকিৎসা চালাচ্ছি।”
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘কেউ তো বলেনি আপনি মেরেছেন, ননসেন্সের মতো কথা’, শিশুমৃত্যুতে দিলীপের নিশানায় ববি!