Court on Police: ‘আপনার মুখ দেখতে আদালতে ডাকা হয়নি’, পুলিশ আধিকারিককে তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

Nileswar Sanyal | Edited By: জয়দীপ দাস

Mar 07, 2024 | 11:36 PM

Court on Police: ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান শিলিগুড়ি হায়দার পাড়া এলাকার বাসিন্দা তথা শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী নবীন সরকার। এরপর ৪ ডিসেম্বর তারিখে NJP থানার অধীনে ফুলবাড়ি মার্ডার মোড় এলাকার ক‍্যানেল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। মৃত্যু ঘিরে বাড়তে থাকে রহস্য।

Court on Police: ‘আপনার মুখ দেখতে আদালতে ডাকা হয়নি’, পুলিশ আধিকারিককে তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
মৃত্যু ঘিরে বাড়ছে রহস্য
Image Credit source: TV-9 Bangla

Follow Us

জলপাইগুড়ি: কেস ডায়েরি ছাড়াই আদালতে হাজির হওয়ায় বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল পুলিশ অফিসারকে। একইসঙ্গে তদন্তে একাধিক গাফিলতির অভিযোগ থাকায় আইনজীবীর রহস্যমৃত্যুর মামলায় তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।  

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান শিলিগুড়ি হায়দার পাড়া এলাকার বাসিন্দা তথা শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী নবীন সরকার। এরপর ৪ ডিসেম্বর তারিখে NJP থানার অধীনে ফুলবাড়ি মার্ডার মোড় এলাকার ক‍্যানেল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে তাঁর পরিবার। 

অভিযোগ, ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশের সন্দেহ করে ওই আইনজীবী আত্মহত্যা করেছে। যদিও ওই আইনজীবীর পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ ওই ঘটনা আত্মহত্যা নয়! এর পিছনে অন‍্য কোনো কারণ রয়েছে। পুলিশকেও তাঁরা সে কথা জানান। নবীন সরকারের বাবা নিউ জলপাইগুড়ি থানায় খুনের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন। কিন্তু, কয়েকমাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি দেখতে না পেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্জে  মামলা দায়ের করা হয়। 

আবেদন গ্রহণ করা হলে গত ৪ মার্চ মামলা ওঠে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে। এরপর বিচারপতি এদিন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিককে সকাল সাড়ে দশটায় আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। মামলাকারীর আইনজীবী সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, নির্দেশ মতো এদিন সকাল সাড়ে দশটায় মামলার শুনানি শুরু হয়। দুই পক্ষের থেকে বিভিন্ন  রিপোর্ট পেশ করা হয় আদালতে। এরপরই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু তদন্তকারী অফিসার উত্তম কুমার বাগিরাকে কেস ডায়েরি পেশ করতে বলেন। কিন্তু, কেস ডায়েরি পেশ করতে না পারায় বিচারপতি তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। তারপরেই স্পষ্ট বলে দেন, এদিনই বেলা ২ টার মধ্যে কেস ডায়েরি নিয়ে আদালতে হাজির হতে হবে। পরে ফের দুপুর ২ টার পর শুনানি শুরু হয়। 

সৌরভবাবু বলছেন, আমাদের অভিযোগ ছিল এটি একটি খুনের মামলা। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা মাথায় নিয়ে ভাবে তদন্ত শুরু করা হয়। আমরা বিচারপতিকে বলি পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী এই দেহ ক্যানেলের জলে ঢুবে যাওয়ার পর ৪ টা লকগেট পার করে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার ভেসে গিয়েছে। যদি তাই হয়, জলে ঢুবে কেউ মারা যায়, তবে তাঁর দেহে যা যা চিহ্ন থাকা দরকার যেমন শরীরে ক্ষত চিহ্ন, ফুসফুস কিংবা স্টমাকে জল থাকা, দেহের চামড়া কুঁচকে যাওয়া ইত্যাদি কিছুই ময়নাতদন্তে পাওয়া যায়নি। এইসব বিষয়গুলি আমারা আদালতে তুলে ধরার পর বিচারপতি তদন্তকারী অফিসারকে ভর্ৎসনা করেন। তদন্তকারী অফিসারকে পরিবর্তন করে নতুন কোনও দক্ষ পুলিশ আধিকারিককে দিয়ে এই মামলার তদন্ত করার কথা বলেন। আগামী মঙ্গলবার আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন বিচারপতি। 

শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অলোক ধারা বলেন, পুলিশ এই মামলাটিকে ভুল পথে পরিচালিত করছিল। তা আজকে আদালতের সামনে পরিষ্কার হয়েছে। আদালতে কেস ডায়েরি না নিয়ে আসায় বিচারপতি তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিককে বলেছেন আপনার মুখ দেখতে আমি ডাকিনি। সি ডি আনার পর দেখা যাচ্ছে সিডির কোন যায়গায় কি আছে সেটাও উনি জানেন না।এই তদন্তকারী অফিসার আগে কোনও দিন খুনের মামলার তদন্ত করেননি। তবে কার নির্দেশে এমন আনকোরা পুলিশ আধিকারিক দিয়ে এই মামলার তদন্ত হচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক। সত্য সামনে আসুক। 

সার্কিট বেঞ্চের অ্যাডিশনাল অ্য়াডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী বলেন, আমরা আইনজীবী। রহস্য মৃত্যুর সঠিক তদন্ত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একথা ঠিক বিচারপতি এই মামলায় তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিককে বদল করতে বলেছেন। এই বিষয়ে লিখিত নির্দেশ বের হলে আমি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি ঠিক করব।

Next Article