বাঁকুড়া: নবান্ন অভিযানে গিয়ে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বাসিন্দা মইদুল ইসলামের মৃত্যুতে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু কতটা রাজনীতিক ছিলেন মইদুল? এ নিয়ে কী বলছে তাঁর পরিবার? বামেদের নবান্ন অভিযানে যে তিনি যাচ্ছেন, এ কথা পরিবারের কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করছেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাম ছাত্র যুবদের নবান্ন অভিযানে আহত হয়ে পরে প্রাণ হারানো মইদুল ইসলাম মিদ্যার বোন। যে যুব বাম নেতার মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি মইদুলের বোনের!
যদিও মইদুলের স্ত্রীয়ের মত ভিন্ন। তিনি জানাচ্ছেন, কিছুদিন আগে পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না স্বামী। তবে বেশ কয়েকদিন আগে কোতুলপুরে বামেদের একটা মিটিং হয়। সেখানে গিয়েছিলেন মইদুল। স্ত্রীয়ের আরও দাবি, মইদুল তাঁকে বলেছিলেন কোনও একটা কমিটিতে তাঁকে সদস্য করা হয়েছে। ঘটনাক্রমে এরপর গত বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বের হন। তাঁর নবান্ন অভিযানে যাওয়ার কথা কাউকে জানাতে বারণ করেছিলেন মইদুল, জানাচ্ছেন স্ত্রী।
আরও পড়ুন: কিডনি ফেলিওরে মৃত্যু হয়নি মইদুলের, বলছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট
বাম-ডান দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকেই এই মইদুলের মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছে। বাম নেতৃত্বের দাবি, ৩১ বছর বয়সী মইদুল ইসলাম মিদ্যা ডিওয়াইএফআই নেতা ছিলেন। তবে মৃত মইদুলের বোনের কথায়, ‘দাদা কোনও পার্টি করত না। তাঁকে বৃহস্পতিবার কয়েকজন ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।’ তাঁর আরও দাবি, যে চারজন গত বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়িতে আসেন এঁরা কেউ এলাকার বাসিন্দা নন। অন্যদিকে মইদুলের স্ত্রী বলছেন, জানতাম স্বামী নবান্ন অভিযানে যাচ্ছেন। তবে ১১ তারিখ নবান্ন অভিযানের পর স্বামীর সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়নি বলে জানান। তিনি আরও জানান, এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে জানান, পরের দিন ফিরবেন মইদুল। কিন্তু সেদিনও স্বামী না ফেরায় আবার সেই ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয় তাঁর। বলা হয় মইদুল পরে ফিরবেন। অবশেষে শনিবার মইদুলের স্ত্রী জানতে পারেন স্বামী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এরপর পরিবারের লোকেরা মইদুলকে দেখতে হাসপাতালে যান।
এদিকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বাঁকুড়ার প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রও জানিয়েছেন, মইদুল দলের একজন সমর্থক মাত্র। কোনও নেতা ছিলেন না। তবে নবান্ন অভিযানে গিয়ে তাঁর জখম হওয়া ও অসুস্থতা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, মইদুলের অসুস্থতা নিয়ে সিপিএম নেতা ও চিকিৎসক ফুয়াদ হালিমের সঙ্গে এই ক’দিন প্রায়ই কথা হত তাঁর। পিজিতে নিয়ে যাওয়ারও তোড়জোড় করা হচ্ছিল। তার মধ্যেই মৃত্যু হল যুব কর্মীর।
আরও পড়ুন: মইদুলের পরিবারকে চাকরি ও আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস মমতার, সঙ্গে তুললেন প্রশ্নও
মইদুল কোনও রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন নাকি নেতা, সে আলোচনা ও বিতর্কে অবশ্য কোনও উৎসাহ নেই পরিবারের। তাঁরা শুধু জানেন, কয়েক মাস আগে টোটো কেনা মইদুলের সোমবারই ছিল কিস্তি জমা দেওয়ার দিন। আর এদিনই এল তাঁর মৃত্যুর খবর!