মালদা ও কেতুগ্রাম: কোনও স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা খুব কম থাকলে, সেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। যেসব স্কুলে পড়ুয়া কম অথচ শিক্ষক বেশি, সেই সব স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অন্য স্কুলে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যদিও রাজ্যের শিক্ষা দফতরের আইনজীবী জানিয়েছেন, স্কুল তুলে দিলে রাজনৈতিক চাপ আসতে পারে। বিচারপতির পরামর্শের পর এই ধরনের স্কুলগুলির পরিস্থিতি কেমন, তা দেখতে টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন জেলার বিভিন্ন স্কুলে। সেই সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটা কম, কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তুলনায় বেশি। একাধিক স্কুল ঘুরে এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট টিভি নাইন বাংলায়।
সেন্টার স্কুল অফ গার্লস (জুনিয়র হাই)। মালদার এই স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। কিন্তু পড়ুয়া কই? স্কুলের এই শিক্ষিকা তো বলেই ফেললেন, ‘স্টুডেন্টের ভীষণ সমস্যা।’ ডিআই-এর নজরেও বিষয়টি আনা হয়েছে বলে জানালেন তিনি। পড়ুয়া সংখ্যার কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আজ তো দু’জন এসেছে। স্টুডেন্ট আসছে না। পড়ুয়াদের ফোন করে ডাকতে হচ্ছে।’ তাঁর কথায়, পার্শ্ববর্তী স্কুলগুলি থেকে যদি কিছু পড়ুয়া পাওয়া যেত, তাহলে ক্লাস ঠিকভাবে চলত। বলছেন, ‘তিন তলার বিল্ডিংয়ে ক্লাস হচ্ছে না বলে পায়রা এসে বাসা বাঁধছে। পরিকাঠামো সব আছে। পর্যাপ্ত শিক্ষকও আছেন। শুধু পড়ুয়া নেই।’ এদিন দুইজন পড়ুয়া এসেছে। একজন পঞ্চম শ্রেণি, একজন ষষ্ঠ শ্রেণির। দুইজনকে একই ঘরে বসিয়ে ক্লাস চলছে।
জানা যাচ্ছে, এমন অবস্থা শুধু এই স্কুলে নয়। মালদা শহরে এমন স্কুলের সংখ্যা অন্তত দশটি। ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে ধুঁকছে স্কুলগুলি। এমন নয় যে জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বিষয়টি নিয়ে অবগত নন। স্কুলের তরফ থেকে নিয়মিত তাদের বিষয়টি জানানো হয়। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা মাঝে মাঝে পরিদর্শনেও আসেন স্কুলগুলিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
মালদার ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী অবশ্য অভিভাবকদের দিকেই কিছুটা দায় ঠেলছেন। বলছেন, ‘মানুষের মধ্যে, অভিভাবকদের মধ্যে স্বাদে একটু বদল হয়েছে। তারা চাইছেন একটু নামকরা স্কুলগুলিতে ভর্তি করাতে। স্কুল বন্ধ হবে না। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তার জন্য একটি কাউন্সেলিং দরকার।’ যদিও বিষয়টি নিয়ে শাসক শিবিরকে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিজেপি শিবির। স্থানীয় বিজেপি নেতা গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল বলছেন, ‘ছাত্র-ছাত্রী নেই, অথচ শিক্ষকের সংখ্যা প্রচুর আছে। আমরা মনে করি, এটি ক্যাডার পোষা ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে প্রশাসন যুক্ত। সবাই জানে, কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না।’
একদিকে যখন মালদায় এমন দৃশ্য। তখন আবার পুরো উল্টো একটি চিত্র দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে। সেখানে মাসহারা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষক ভাড়া করে স্কুল চালাতে হচ্ছে নিরোল কনকতলা জুনিয়র গার্লস স্কুলে। স্কুল পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। সেখানে ৩১৭ জন পড়ুয়ার জন্য স্থায়ী শিক্ষিকা রয়েছেন মাত্র দুই জন। তাঁদেরই স্কুল শুরুর, ক্লাস শেষ হওয়ার ও ছুটির ঘণ্টা বাজাতে হয়। ছাত্রীদের কথা ভেবে শিক্ষক ও অভিভাবকরা মেলে সিদ্ধান্ত নেন মাসহারার ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক নেওয়া হয়। স্কুল সূত্রে খবর, অস্থায়ী শিক্ষকদের ছাত্রীপিছু মাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সব ক্লাস হয়ে ওঠে না। কেতুগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক কুন্তল দত্ত জানাচ্ছেন, ওই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু এখনও নিয়োগ হয়নি। মহকুমাশাসক অর্চনা পি ওয়াংখেড়ে জানাচ্ছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং এই নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ কী করা যায়, সেই বিষয়টি তিনি দেখবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।