মালদা: বয়সের হিসাবে মা ছেলের থেকে সাত বছরের বড়। বাবার বয়সও কাছে-পিঠে। চার সদস্যের ভোটার (Fake Voter) তালিকা দেখে রীতিমত চক্ষু-চড়কগাছ ভোট কর্মীদের। ঘটনা খতিয়ে দেখতে শুরু হয়েছে তদন্ত। মালদার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় এমন ঘটনা ভূরি-ভূরি। কীভাবে ঘটল এমন আজব কাণ্ড? তদন্তে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যে গ্রামগুলি অবস্থিত সেইখানেই এমন ঘটনা ঘটছে। এক ভোটকর্মীর নজরে প্রথম বিষয়টি ধরা পড়ে ভোটার তালিকায় মা-এর থেকে ছেলে সাত বছরের বড়। তখনই চমকে যান তিনি। এরপর তদন্ত করতেই জানতে পারা যায় এই ধরনের পরিবারগুলি মূলত বাংলাদেশ থেকে এসেছে। শুধু এই একটি পরিবারই নয়, আরও কতগুলি পরিবার রয়েছে যাঁরা বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ সহ একাধিক জায়গা থেকে উঠে এসে মালদার বৈষ্ণবনগরে আশ্রয় নিয়েছেন।
অভিযোগ, এই সকল পরিবারগুলির দিব্য এদেশে আসে। কারোর না কারোর বাড়িতে আশ্রয় নেন। একমাস-দু’মাস কখনও বা তিন,চারমাস এখানে থাকেন। পরিচয় গোপন রেখে ভোটার লিস্টেও উঠে যায় এদের নাম। শুধু তাই নয়, এদের সঙ্গে উঠে আসছে প্রভাবশালী যোগও। কারণ, এই ভুয়ো ভোটার তালিকা বানাতে এদেরকে সাহায্য করছে প্রভাবশালীরা।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “ওরা তো ভোট দেয়। ভুয়ো নামে ভোটের কার্ড করে নিয়েছে। পরে ওরাই সন্ত্রাসবাদী কাজ করে।” ডালু মহম্মদ শেখ নামে এক ভোটকর্মী বলেন, “বৈষ্ণবনগর অন্তর্গত বিধানসভার সাওয়াজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ৪৩ নম্বর বুথে আমরা কিছু ভুয়ো ভোটারের তালিকা দেখতে পাই এবং সেখানকার স্থানীয় মানুষজনের কাছ থেকে জানতে পারি ভোটারগুলো এখানে মোটেই বাস করে না। এদের কোনও বাড়িঘর নেই, নথি নেই। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম আছে। আমার মনে হয় শুধু ভোট দেওয়ার জন্যই নাম উঠিয়ে রেখেছে।”
ভুয়ো ভোটার নিয়ে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য জানান, “একই রকম কথা। বাংলাদেশ থেকে এখানে এসে ভোটার কার্ড করে নিচ্ছে। সীমান্তের গ্রাম গুলোতে নিয়মিত ভাবে আসছে বাংলাদেশীরা।” বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জানানো হয়েছে।আলদা করে অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলবো।মালদা জেলার সীমান্তকে জঙ্গিরা ব্যবহার করেই আসছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ হয়েই চলেছে।ভোটার তালিকায় এমন বহু ভুয়ো নাম পাওয়া গেছে।সীমান্ত পেতিয়ে মালদায় এসে জঙ্গিরা আশ্রয় নিচ্ছে। ভোটের স্বার্থে তৃণমূল, রাজ্যসরকারের মদত রয়েছে।” তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানান, “মালদা জেলার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা নতুন নয়। মন্ত্রী থাকাকালীন এই বিষয়ে সরব হয়েছি।রাজ্য এবং কেন্দ্র দুই সরকারের দায়িত্ব রয়েছে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার। ভুয়ো ভোটার বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করবে প্রশাসন।”
মালদা জেলা পরিষদ, সভাধিপতি রফিকুল হোসেন বলেন, “এই তথ্য সামনে আসছে। অনুপ্রবেশ ও ভুয়ো ভোটার। যা আগামী দিনে ভালো হবে না রাজ্য ও দেশের পক্ষে। তবে প্রশাসন সচেতন, এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। ইলেকসন ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে।” জেলাশাসক জানান, “জেলা প্রশাসন এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। একজন অতিরিক্ত জেলা শাসককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার ভোটার তালিকা গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিডিও দেরও।ভুয়ো নাম বাদ যাবে।”