মালদা: অশান্তি যেন থামছেই না কালিয়াচকে। রবিবারের সকালেই তৃণমূল নেতার পরিত্যক্ত বাড়িতে মজুুত বোমা বিস্ফোরণের (Bomb Blast) ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তদন্তে নেমেছে পুলিশ ও বম্ব স্কোয়াড। এ বার, জানা গেল, রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের (Sabina Yeasmin) বাড়ির সামনেই বোমা মজুত করার কাজ চলছিল। শুধু তাই নয় গোটা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও কয়েক বালতি তাজা বোমা।
তদন্তাকারীদের অনুমান, গোটা এলাকা তল্লাশি করলেই বোমার সন্ধান মিলতে পারে। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির কাছে এইভাবে বোমা মজুত করা চলছিল তা কি বিন্দুমাত্র টের পাননি তৃণমূল নেত্রী? উঠছে সেই প্রশ্নও। পাশাপাশি, রফিকুল শেখ নামের তৃণমূলে নেতার ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে বোমা মজুতের ঘটনায় ঠিক কারা কারা যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, এ নিয়ে মুখ খোলেননি খোদ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও ফোন বেজে গিয়েছে।
ঘটনায় তৃণমূল নেতা কৃষেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেছেন, “তৃণমূলের কোনও কর্মী যদি এই ঘটনায় যুক্ত থাকে তবে তার যোগ্য শাস্তি হবে। তৃণমূল করে বলেই তাকে রেযাদ করা হবে না। আইন আইনের পথেই চলবে।” অন্যদিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতার দাবি, রাজ্যের প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির এত কাছেই যদি এভাবে বোমাবিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তবে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার মান যে কোথায় তা স্পষ্ট। শাসকশিবিরের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই এই বোমাবাজি ও অবৈধ বোমা মজুতের কারবার বলে দাবি পদ্ম শিবিরের।
ঠিক কী হয়েছিল এদিন?
রবিবারের সকালে, আচমকাই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল তৃণমূল নেতার পরিত্যক্ত বাড়ি। বোমবাজির জেরে ছুটে আসেন এলাকাবাসী। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। কালিয়াচক ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাটুয়াতলী চাঁদপুর গ্রামের পরিচিত তৃণমূল নেতা রফিকুল শেখের বাড়িতে ভোররাত্রে বোমাবাজির (Bomb Blast) আওয়াজ পাওয়া যায়।
কালিয়াচক থানার পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িটিতে অবৈধভাবে বোমা মজুত করা হচ্ছিল। কোনওকারণে দুই-তিনটি বোমা একসঙ্গে ফেটে যায়। এখনও বাড়ির টালির চালে তিনটি তাজা বোমা রয়েছে। বোমের তীব্রতায় আশেপাশের কয়েকটি ঘরের চালা উড়ে গিয়েছে। এলাকার মানুষকে সরানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই, পলাতক অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা রফিকুল শেখ ও তাঁর অনুগামীরা। গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। খবর দেওয়া হয়েছে বোম স্কোয়াডকেও।
সূত্রের খবর, ওই বাড়িটি তৃণমূল নেতা রফিকুলেরই। তবে বাড়িটিতে কেউ থাকতেন না। ওই বাড়িতেই গোপনে দীর্ঘদিন ধরে চলত বোমা বাঁধার কাজ। কাছেই একটি বাড়ি বানিয়ে সেখানেই থাকতেন রফিকুল। তবে বোমাবাজির পর থেকেই আর দেখা মেলেনি রফিকুলের। সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েতে রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন অনুগামী একটি গোষ্ঠী রয়েছে। সেই গোষ্ঠীর বিরোধী নেতা হলেন রফিকুলরা। মূলত, সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই নাশকতার ছক কষা হচ্ছিল। যেখান থেকে এই বোমা মজুতের কাজ চলছিল।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই কালিয়াচকের বাবুরহাট গ্রামের এক পরিত্যক্ত জমিতে বোমা মজুত করে রাখা হয়েছিল। কয়েকজন বাচ্চা সেখানে খেলতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণের জেরে আহত হয়। স্থানীয়রা দাবি করেন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেই, তৃণমূলের (TMC) পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচন ঘিরে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অবরুদ্ধ হয় জাতীয় সড়ক। আর সেই অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশের দিকে ধেয়ে আসে গুলি! পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। গোলাগুলির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কালিয়াচকের ১ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান আলিউল শেখ। বাজির আগুন ছিটে লাগায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আলিউল। তাঁর আরও অভিযোগ, বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। মূলত পঞ্চায়েতের প্রাক্তন ও নবনির্বাচিত প্রধানের মধ্যেই বিরোধের জেরে চলে ওই গুলিবর্ষণ।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘ব্যাঙ কোথাকার! সাগর থেকে ডোবায় গিয়েছে’, বাবুলকে কটাক্ষ দিলীপের