মালদহ: পণের দাবিতে গার্হস্থ্য হিংসা। তা মেটাতে গ্রামে বসে সালিশি সভা। কিন্তু সালিশি সভার শেষেও রাতভর বধূর ওপর চলে নারকীয় অত্যাচার। বদ্ধঘরে বিবস্ত্র করে হাত পা বেঁধে চলে নির্যাতন গৃহবধূকে। চাকু ব্লেড দিয়ে চিরে দেওয়া হয় সারা শরীর। কেটে দেওয়া হয় শিরা। আঘাত করা হয় চোখে-মাথায়। তারপর মৃত ভেবে সেই অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয় ঘরের বাইরে রাস্তায়। ভয়ঙ্কর, নৃশংস অভিযোগ মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। অভিযোগ স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। সোমবার রাতেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ওই গৃহবধূর পরিবার। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক।
হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা ওই নির্যাতিতার বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। নির্যাতিতার বাবার মৃত্যু হয়েছে বছর বারো আগেই। মা-ই নিজের সব কিছু দিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। অভিযোগ,বিয়ের দুই বছর পর থেকেই পণের দাবিতে ওই বধূর উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত তাঁর স্বামী, দেওর-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা।
দীর্ঘদিন চুপচাপ নির্যাতিতা সবটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার চলতে থাকায় মাকে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে তার মায়ের পক্ষে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তবে ধার করে বেশ কয়েক দফায় কয়েক হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
তারপরও নির্যাতন থামেনি বলে অভিযোগ। পাড়া প্রতিবেশীরাও বিষয়টি জানতে পেরে গিয়েছিলেন। সমস্যা মেটাতে গ্রামে একাধিকবার সালিশি সভাও বসে। একাধিকবার সেই সালিশিসভায় সমস্যা সমাধানের সূত্র খুঁজে বার করার চেষ্টা চলে। রবিবার রাতেও সালিশি সভা বসে।
কিন্তু তারপর সেই রাতে অত্যাচার মাত্রা ছাড়ায়। অভিযোগ, বন্ধ ঘরে হাত পা বেঁধে প্রাণনাশের জন্য চাকু দিয়ে কোপাতে থাকেন স্বামী ও দুই দেওর। হাত ও পায়ের শিরা কেটে দেওয়া হয়। কোপালে চাকু ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নির্যাতিতা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে রাতেই বাড়ির বাইরে ফেলে দিয়ে আসেন পরিবারের লোকেরা। প্রতিবেশীরা সকালে বিষয়টি দেখে খবর দেন নির্যাতিতার বাড়িতে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে নির্যাতিতাকে। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও এখনও কেউ গ্রেফতার নেই। পরিবারের সদস্যরা পলাতক।