Maldah: ‘ওরা তো গিরগিটি…’ ভোট চাইতে এলেই সাফ বলে দিচ্ছেন সীমান্ত পারের উদবাস্তুরা

Subhotosh Bhattacharya | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Mar 30, 2024 | 12:12 PM

Maldah: কান্তটোলা গ্রামের প্রৌঢ় হরিশচন্দ্র মণ্ডল৷  তিনি বলছেন, "বাপ-ঠাকুরদার জন্ম এই গ্রামে৷ অনেক বড় পাকা বাড়ি ছিল৷ ছ’বিঘা জমি ছিল৷ গত শ্রাবণে সব নদীতে চলে গিয়েছে৷ এই ভাঙন সমস্যা বহুদিনের৷

Maldah: ওরা তো গিরগিটি... ভোট চাইতে এলেই সাফ বলে দিচ্ছেন সীমান্ত পারের উদবাস্তুরা
মালদহের বাসিন্দারা
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

মালদহ: ভোট আসে, ভোট যায়, নেতার মুখ বদলে যায়। বদল হয় ক্ষমতার। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বদলায় না। যে প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় না। যা খুব ভালো করেই জানেন ভাঙন পীড়িতরা। কারণ দিনের পর দিন কখনও গঙ্গা, কখনও ফুলহার কেড়ে নিয়েছে সর্বস্ব। জমি ঘর নিমেশে চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। এক লহমায় উদবাস্তু হয়েছে মানুষ। নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। কিন্তু প্রত্যেক নির্বাচনেই সব দলের নেতারা এসেছেন আর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভাঙন প্রতিরোধের। ভোট পেরোলেই দেখা যায় না কাউকে। ভাঙন পীড়িতরা যে তিমিরে ছিল,  সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। উত্তর মালদহে গঙ্গা আর ফুলহার দুইএর ভাঙন। অন্যদিকে দক্ষিণ মালদায় গঙ্গার।

দক্ষিণ মালদায় কালিয়াচক২, ৩ নম্বর ব্লকে এবং মানিকচকে গঙ্গা ভাঙনে সর্বস্ব খুইয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। অন্যদিকে আবার  সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর মালদহের গঙ্গার সবচেয়ে বেশি ছোবল পড়েছে রতুয়া-১ ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কান্তটোলা, শ্রীকান্তটোলা সহ ৬-৭টি গ্রামে৷

এই পঞ্চায়েতের জঞ্জালিটোলা, খাট্টিটোলা, খাকসাবোনা গ্রামগুলির মধ্যেই গঙ্গায় নিশ্চিহ্ন৷ ওই গ্রামগুলির অনেক মানুষ এখনও বাঁধে থাকেন৷ গত মরশুমে প্রশাসনের তরফে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বটে৷ কিন্তু তাও সাময়িক। পরে আর খোঁজ রাখেনি কেউ।

কান্তটোলা গ্রামের প্রৌঢ় হরিশচন্দ্র মণ্ডল৷  তিনি বলছেন, “বাপ-ঠাকুরদার জন্ম এই গ্রামে৷ অনেক বড় পাকা বাড়ি ছিল৷ ছ’বিঘা জমি ছিল৷ গত শ্রাবণে সব নদীতে চলে গিয়েছে৷ এই ভাঙন সমস্যা বহুদিনের৷ গঙ্গা এই গ্রাম থেকে একসময় ছ’ক্রোশ দূরে ছিল৷ এখন গ্রামে৷ কেউ কিছু করেনি, করে না৷ গঙ্গা বাঁধার প্রতিশ্রুতিও এখন কেউ দেয় না৷ সবাই এই ভাঙন নিয়ে কামাই করে যাচ্ছে৷ আমাদের সব শেষ৷ কিন্তু ভবিষ্যৎ তো রয়েছে৷ ওদের জন্যই সরকার পুনর্বাসনের জায়গা দিক৷”

গত বর্ষায় ঘর হারিয়েছেন অর্চনা মণ্ডলও৷  তিনি বলেন, “নদীতে ঘর পড়ার পর অনেকে এসেছিল৷ সবার কত কথা! এই করে দেব, ওই করে দেব৷ ভরসা করেছিলাম ওদের৷ কিন্তু কেউ কিছু করেনি৷ একটা জায়গা পেলে মাথা গোঁজার বন্দোবস্ত করে নিতে পারতাম৷ কিন্তু এমএলএবাবু কাগজে সই করল না৷” তিনি আরও বলেন, “খগেন মুর্মু বলেছিল, ওরা জায়গা দিলে সে ঘর বানানোর জন্য কিছু পয়সা দেবে৷ জায়গা না হওয়ায় সেই পয়সাও পেলাম না৷ এ ওর কাঁধে দোষ দিচ্ছে৷ আর আমরা গঙ্গাপাড়ে জেগে রাত কাটাচ্ছি৷ জায়গা না পেলে এবার ভোটই দেব না৷”

এই গ্রামেরই বর্তমান প্রজন্ম আশিস মণ্ডলের বক্তব্য, “জন্ম থেকে গঙ্গার ভাঙন দেখছি৷ বাবারা তিনবার বাড়ি পাল্টেছে৷ আমি অনেক ভোট দেখেছি৷ ভাঙনকে ভোটের ইস্যু করে সব রাজনৈতিক দল৷ ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দেয়৷ সব ভাঁওতা৷ এবারও সব দলের আসা শুরু হয়েছে৷ ওরা তো গিরগিটির মতো রঙ বদলায়।” এবারও অবশ্য রাজনৈতিক দলের তরফে আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু সে আশ্বাসে চিড়ে ভিজছে না।

Next Article