না চাইতেই অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার! ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে বিবাহিত মহিলারাও পাচ্ছেন টাকা, নেপথ্যে কারা?

tista roychowdhury | Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Jul 03, 2021 | 9:08 PM

Rupasree Prakalpa:কেউবা চার সন্তানের মা। কেউবা তিন সন্তানের মা। কারোর বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে কারোর বা ৫ বছর আগে। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। অভিযোগ,  সেই সব দম্পতিদের বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে , পঞ্চায়েত প্রধান ও আধিকারিকদের হাতে করে যুবশ্রী টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি দুর্নীতি চক্র।

না চাইতেই অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার! রূপশ্রী প্রকল্পে বিবাহিত মহিলারাও পাচ্ছেন টাকা, নেপথ্যে কারা?
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

শুভতোষ ভট্টাচাৰ্য ও কৌশিক ঘোষ: ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘রূপশ্রী’। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্নের’ দুই প্রকল্প। সেই প্রকল্পকে ঘিরেই আর্থিক তছরূপের অভিযোগ উঠল মালদা ও মুর্শিদাবাদে। অভিযোগ, বিবাহিত মহিলারা এমনকী সন্তানবতী মায়েরারও রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু, রূপশ্রীর (Rupasree Prakalpa) জন্য কোনওদিনই তাঁরা আবেদন করেননি। তবু এসে পৌঁছেছে টাকা। কিন্তু সেই টাকার পুরোটা পাচ্ছেন না গ্রহীতারা। কিছু টাকা হাতে এসে বাকিটা চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে।

মালদা: 

মালদার পঞ্চনন্দপুরের সুলতানটোলার বাসিন্দা চোনো বিবির বয়স প্রায় ত্রিশের কোঠায়। সাত বছর আগে হুমায়ুন শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এখন তিনি চার সন্তানের মা। মোথাবাড়িতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে চানো বিবির। অভিযোগ, সম্প্রতি তাঁর অ্যাকাউন্টে রূপশ্রী প্রকল্পের (Rupasree Prakalpa) ২৫ হাজার টাকা ঢুকেছে। কিন্তু, তিনি নাকি রূপশ্রীর জন্য আবেদনই করেননি। এমনকী, বেনোফিশিয়ারি চানো বিবিকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

ওই এলাকারই অন্য বাসিন্দা সোনা বিবি। স্বামী তুফান শেখ। দুই সন্তানের জননী সোনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও ঢুকেছে রূপশ্রীর  ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু, সেই টাকা হাতে এসে পৌঁছয়নি আর। ২৫ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন সোনা বিবি। অভিযোগ বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন  পঞ্চায়েত প্রধান রিজিয়া বিবি।

কেউবা চার সন্তানের মা। কেউবা তিন সন্তানের মা। কারোর বিয়ে হয়েছে ১০ বছর আগে কারোর বা ৫ বছর আগে। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। অভিযোগ,  সেই সব দম্পতিদের বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে , পঞ্চায়েত প্রধান ও আধিকারিকদের হাতে করে যুবশ্রী টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি দুর্নীতি চক্র। দীর্ঘদিন থেকে কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে এই চক্রটি কাজ করছে। সম্প্রতি, ব্লক আধিকারিকের কাছে এই লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

বিডিও অনির্বাণ সেনগুপ্তের কথায়, “এই বিষয়ে এক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা গোটা অভিযোগটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। বিশেষ কমিটি গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। আমরা খুব দ্রুত এই ঘটনায় যুক্ত দোষীদের শাস্তি দেব।” যদিও, পঞ্চায়েত প্রধান রিজিয়া বিবি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এই অভিযোগ। যার অভিযোগ করছে তারা বিরোধী দলের লোক। একটি সংসদে আড়াই থেকে তিন হাজার লোক থাকে। সকলকে চেনা সম্ভব নয়। তাই যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যদের অনুমতি লাগে।সরকারি আধিকারিক রা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রধানকে রিপোর্ট দেয়।তারপরেই প্রধান সেই কাগজে সই করে। রুপশ্রীর (Rupasree Prakalpa) ক্ষেত্রে গোটা পক্রিয়াটির তদন্ত করে ব্লক ও পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা। এখানে প্রধানের কোনও হাত নেই। যারা অভিযোগ করেছে তারা কংগ্রেসের দুলাল শেখের লোক।”

ব্লক কংগ্রেস সভাপতি দুলাল শেখ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ” গ্রামে গ্রামে শুধু রূপশ্রী নয়,কন্যাশ্রী এমনকী ১০০ দিনের কাজ নিয়েও একের পর এক দুর্নীতি হচ্ছে। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব হবে কংগ্রেস। শাসকদল নিজেদের দোষ  আমাদের নামে চালাচ্ছে।”

মুর্শিদাবাদ

রূপশ্রী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সাগরদীঘিতেও। মণিগ্রামের কড়াইয়া গ্রামের বাসিন্দা রেখা কর্মকারের অভিযোগ, আবেদন না করা সত্ত্বেও রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা ঢুকেছে তাঁর অ্যাকাউন্টে। তিন সন্তানের মা রেখার অভিযোগ, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে রূপশ্রীর টাকা আত্মসাৎ করেছেন স্থানীয় দুই বাসিন্দা সাদ সেখ ও রবিউল সেখ। অভিযোগ, গত ১৫ ই জুন গ্রামের দুই বাসিন্দা সরকারি স্কিমে পাঁচ হাজার টাকার প্রলোভন দিয়ে তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে যায়। পরের দিন ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহক দেখেন তাঁর অ্যাকাউনটে ২৫ হাজার টাকা ঢুকেছে। সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউনটে ট্র্যান্সফারও হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হন গ্রাহক ও তাঁর স্বামী। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্য়েই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পরেই যে দুটি প্রকল্প চালু করেন মেয়েদের জন্য তার মধ্যে অন্যতম হল রূপশ্রী প্রকল্প (Rupasree Prakalpa)। এই আর্থিক অনুদান প্রকল্পে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ২৫ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য় দেওয়া হয়। ১৮ বছর থেকে অবিবাহিত মেয়েরাই এই প্রকল্পের ভোক্তা। তবে বিয়ে হয়ে গেলে আর এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে চোনা বিবি, সোনা বিবির মতো বিবাহিত মহিলারা কী করে এই প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন? কোনও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চক্র কি এর নেপথ্যে জড়িয়ে আছে? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই ধরনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।

আরও পড়়ুন:  দিদিগিরি! ট্রেনিং ছাড়াই টিকাদান যৌনকর্মীদের, কাঠগড়ায় তৃণমূলের বিদায়ী ডেপুটি মেয়র

Next Article