Sand Smuggling: অবৈধ বালিপাচার রুখতে আচমকাই অভিযান, খবর পেয়েই ভরা নদীতে ঝাঁপ লরিচালকের!
Purba Bardhaman: জানা গিয়েছে, ভূমিসংস্কার দফতরের আধিকারিকরা বৃহস্পতিবার ঘাটে-ঘাটে অভিযানে যান। মানিকহাটি ঘাটে যখন তাঁরা যাচ্ছিলেন সেইসময়ে দূর থেকে সরকারি গাড়ি দুটি দেখতে পান এক লরির চালক।
পূর্ব বর্ধমান: বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে রীতিমতো বিপত্তির মুখে পড়েছে দামোদরের নিম্ন উপত্যকার বাসিন্দারা। বন্যা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে একাধিক বিপদ গিয়েছে। বারবারই তাঁরা অভিযোগ করেছেন অবৈধ বালি পাচারের (Sand Smuggling) জেরেই নদীগুলির নাব্যতা কমেছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ আর মুনাফা লুটেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ বার, অবৈধ পাচার রুখতে গিয়ে আজব ঘটনার সাক্ষী থাকলেন সরকারি আধিকারিকরা। তাঁদের দেখে জলে ঝাঁপ দিয়ে কার্যত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন এক লরির চালক। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি মানিকহাটি ঘাটের।
ঠিক কী হয়েছিল? জানা গিয়েছে, ভূমিসংস্কার দফতরের আধিকারিকরা বৃহস্পতিবার ঘাটে-ঘাটে অভিযানে যান। মানিকহাটি ঘাটে যখন তাঁরা যাচ্ছিলেন সেইসময়ে দূর থেকে সরকারি গাড়ি দুটি দেখতে পান এক লরির চালক। নাম তাঁর হরিপদ সিং। লরিতে বালি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সরকারি আধিকারিকদের দেখতে পেয়ে কালবিলম্ব না করে আচমকাই দামোদরের জলে ঝাঁপ দেন তিনি।
এদিকে, ভরা নদীতে ওভাবে হরিপদকে ঝাঁপ দিতে দেখে আঁতকে ওঠেন সরকারি আধিকারিকরা। পাশাপাশি তাঁদের মনে সন্দেহের উদ্রেকও হয়। দ্রুত হরিপদকে জল থেকে উদ্ধার করতে পদক্ষেপ করেন তাঁরা। দামোদরে ভাসমান দুটি জেলেডিঙি হরিপদকে উদ্ধার করে আধিকারিকদের কাছে নিয়ে আসে। অন্যদিকে, সরকারি আধিকারিকদের জন্যই ওই লরির চালক ওভাবে নদীতে ঝাঁপাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। তারা দ্রুত সরকারি আধিকারিকদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ।
সরকারি আধিকারিকরা জানান, নিয়মমাফিক নদীর পারে এই অভিযান চলছে। পাল্টা, গ্রামবাসীদের দাবি, ভরা নদে ঝাঁপ দেওয়ায় ওই লরি চালকের মৃত্য়ু অবধি হতে পারত। তাই তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যদিও, সরকারি আধিকারিকরা জানান, নিয়ম মেনে সব ঘাটেই অভিযান চালানো হচ্ছে। কেন ওই চালক ঝাঁপ দিয়েছিলেন জলে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, নভেম্বরের শুরুতেই দামোদর-অজয় নদ চত্বরে বালিপাচারে যুক্ত ‘কিং পিং’ পারভেজ আলম সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, ‘কান টানলে মাথা আসবে’। পারভেজের গ্রেফতারির দৌলতে মূল মাথাগুলিকে শনাক্ত করাও সম্ভব হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম জেলা সহ একাধিক জায়গায় অবৈধভাবে বালিঘাট চালাতেন পারভেজ। কয়েক’শো কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালি পাচার করার অভিযোগ রয়েছে পারভেজের বিরুদ্ধে। বেআইনি বালি কারবারের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে কয়েকজনকে গ্রেফতারের পরেই অন্যতম পান্ডা পারভেজের নাম উঠে আসে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকবছর ধরে পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, কাঁকসা জুড়ে বালি মাফিয়াদের দাপট ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। দামোদরের বালির চাহিদাও বিপুল। সেই সুযোগই নিয়েছে বালি মাফিয়ারা।
গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে দামোদর, অজয় নদের বুক চিরে মেশিন বসিয়ে চলত বালি উত্তোলন।
ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ অনুযায়ী, বর্ষায় নদী থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু বৈধ বালি ব্যবসায়ীরা এপ্রিল-মে মাস থেকে ব্যবসার জন্য নদী তীরবর্তী জায়গায় বালি মজুত করে।
সূত্রের খবর, সেই মত মজুত বালির পরিমাণ অনুযায়ী ১৬৫ টাকা প্রতি ১০০ সিএফটি বালির রয়েলটি ধার্য হয়। তা জমা দেওয়ার পর ভূমি রাজস্ব দফতর চালান ইস্যু করে। বৈধঘাট থেকে বালি তুললেও বালি মজুতের কোনও অনুমতি না থাকায় অবৈধ বালি মজুত করা হচ্ছে বলে এমনই অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিএলআরও। সেইমতো তদন্তে নামে পুলিশ। চলে ধরপাকড়, জিজ্ঞাসাবাদ। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় পারভেজকে।
নদী থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন কোনও নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই অবৈধ বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, নদীতীরে ১০০ মিটার দূরে দূরে বালি তোলায় বরাবরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বহু জায়গাতেই ১০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার জলপ্রবাহ রুখে নদীর মাঝবরাবর বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাড় ঘেঁষে জলস্রোত বইতে থাকায় ভূমিক্ষয় ঘটছে।
বালি মাফিয়া রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। নতুন স্যান্ড মাইনিং পলিসির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, বালি খনন নিয়ে অনেক অভিযোগ সামনে আসছে। তাই ‘স্যান্ড মাইনিং পলিসি ২০২১ আনা হয়েছে। স্থানীয় মাফিয়ারা বালি, কয়লা, পাথর পাচার করে বলে অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে। আবার কাউকে খননের দায়িত্ব দিলে তিনি চারগুণ বেশি খনন করে নেন। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এতদিন কেবল জেলাশাসকের হাতেই খননের দায়িত্ব থাকত। সেই দায়িত্ব এ বার মাইনিং কমিটির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: তৃণমূলে যোগ না দিলে খেলায় ‘না’! লিয়েন্ডার নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ