মালদহ: দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনা ঘিরে এই মুহূর্তে সরগরম মালদহ। যাঁদের নির্যাতন করা হয়েছে, পুলিশ আবার তাঁদেরই গ্রেফতারও করেছে। আপাতত তাঁরা জেল হেফাজতে। যা নিয়ে সরব বিজেপি। ইতিমধ্যেই বঙ্গ বিজেপির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। এ আবহে সোমবার সংসদের বাদল অধিবেশনও যে মালদহ নিয়ে উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তা অনুমেয়। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তি বাড়ছে জেলা পুলিশের।
ঘটনার সূত্রপাত গত রবিবার ১৬ জুলাই। এক বিজেপি নেতার দেহ উদ্ধার হয় বামনগোলা থানার নালাগোলা এলাকায়। পরদিন ১৭ জুলাই স্থানীয় নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশও সেই বিক্ষোভে শামিল হয়। এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। ঠিক তার পরদিন ১৮ জুলাই বামনগোলা থানারই পাকুয়াহাট ফাঁড়ি এলাকায় পাকুয়াহাটেই দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের অভিযোগ ওঠে। দুই মহিলা লেবু কেনাবেচা করতে এসেছিলেন ওই হাটে। মানিকচকে তাঁদের বাড়ি।
সূত্রের খবর, এরপরই নির্যাতিতা দুই মহিলাকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু পাকুয়াহাটে চুরির অভিযোগে নয়, তার আগের দিন নালাগোলায় যে অশান্তি হয়েছিল সেই ঘটনায়। এরপর বুধবার আদালত ১৪ দিনের জেল হেফাজতও দেয়। যদিও বেধড়ক মারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের ঠাঁই হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। যদিও ২০ জুলাই অবধি এই বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনা সামনে আসেনি। ঘটনার সূত্রপাত ২১ জুলাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এই ভিডিয়ো। নতুন করে ময়দানে নামে রাজনৈতিক দলগুলি। ২২ জুলাই এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। তার মধ্যে ৩ জন মহিলা, ২ জন পুরুষ। দুই পুরুষের মধ্যে আবার একজন, যিনি ভিডিয়োটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
এরপরই একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনায়। পাকুয়াহাটে মারধর, অথচ নালাগোলার ঘটনায় গ্রেফতারি? যদিও পরে পুলিশ একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে পাকুয়াহাটের ঘটনায়। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি প্রতিবাদের ঝাঁঝ বাড়ায়। প্রতিবাদে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে রাতভর ধরনায় বসেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। নির্যাতিতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তোলে বিজেপি।
সূত্রের খবর, নির্যাতিতাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে হিংসা ছড়ানো, অস্ত্র নিয়ে হিংসা, অন্যায়ভাবে জমায়েত, পুলিশি কাজে বাধাদান, পুলিশকে হেনস্থা। এরমধ্যে ২টি আবার জামিন অযোগ্য ধারা (৩৩২ ধারায় পুলিশকে মারধর ও ৩৫৩ ধারায় পুলিশকে নিগ্রহ)। বিজেপির দাবি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দুই নির্যাতিতাকে।
বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “আমাদের দাবি পুলিশ মেনে নিয়েছে। অ্যাডিশনাল এসপি কথা দিয়েছেন। কথা না রাখলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।” অন্যদিকে খগেন মুর্মুর দাবি তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এই ঘটনার জন্য দুই পুলিশ আধিকারিক বামনগোলা থানার আইসি ও নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়ির এক অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে। তাই এই ধরনা তুলে নিচ্ছেন বলেও জানান।
তৃণমূলের টাউন সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, “বিজেপি আসলে সত্যিকে লুকিয়ে রাজনীতির ফয়দা নিচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আমরা বলব, এ ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা। দোষীদের শাস্তির দাবি করছি। তবে রাজনীতির স্বার্থে কিছু রাজনৈতিক দল মালদহকে অচল করে রাখছে।”
মণিপুরের ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে। এই অবস্থায় মালদহের ঘটনায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। সোমবার সংসদে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে সরব হতে পারে বিরোধীরা। অন্যদিকে, খগেন মুর্মু জানিয়েছেন, তাঁরা লোকসভায় মালদহের ঘটনা তুলে ধরবেন। মালদহ জেলা প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ঘটনার রেশ জাতীয় স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে পুলিশের। নির্যাতিতা দুই মহিলার বিরুদ্ধেই যে যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি বলে মনে করছেন জেলা পুলিশেরই একাংশ।