মুর্শিদাবাদ: বিধানসভা নির্বাচন আবহে দলবদলের যে হিড়িক উঠেছিল তার রেশ এখনও কাটেনি। কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে জেলা পরিষদে এক বড় রদবদল চোখে পড়েছিল। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে (INC) যোগ দিয়েছিলেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মোশারফ হোসেন। সহকারী সভাধিপতি বৈদ্য়নাথ দাস তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু, ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই সুর বদলাতে শুরু করেন দুই প্রভাবশালী নেতৃত্ব। বুধবার, দুই প্রাক্তনীর সদস্যপদ বাতিল করার কথা ঘোষণা করলেন মালদা ডিভিশনাল কমিশনার।
নির্বাচন আবহে মোশারফ হোসেন ও বৈদ্যনাথ দাস দল ছাড়লেও বিধানসভা নির্বাচনের পর ফের পুরনো দল তৃণমূলেই ফেরার ইচ্ছেই প্রকাশ করেন, গুঞ্জন এমনটাই। তাঁদের ‘ইচ্ছায়’ যদিও বিশেষ আমল দেয়নি শাসক শিবির। জেলা পরিষদের তৃণমূল নেতা তজিমুদ্দিন খান অভিযোগ করে জানান, নির্বাচনের কঠিন সময়ে যাঁরা দল ছেড়ে গিয়েছেন সেই ‘গদ্দারদের’ আর দলে ফেরানো হবে না। প্রাক্তন সভাধিপতি, সহ সভাধিপতি সহ মোট ১১জন সদস্য দলের সঙ্গে ‘গদ্দারি’ করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাই তাঁদের আর দলে ফেরানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন জেলা পরিষদের সদস্যরা। গত ২ জুলাই তৃণমূল নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে ভার্চুয়াল বৈঠক করা হয়েছিল। বুধবার, সেই বৈঠকের ফলস্বরূপ মোশারফ হোসেন ও বৈদ্যনাথ দাসের সদস্যপদ খারিজ করা হয়। তবে তাঁদের ফের দলে ফেরানো হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
যদিও, মোশারফ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন নিজের ইচ্ছায় তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং স্বেচ্ছায় তাঁর অবস্থান ষ্পষ্ট করেছেন। ঘটনায়, কংগ্রেস নেতা জয়ন্ত দাস বলেন, “মোশারফ হোসেনের সদস্যপদ খারিজের ক্ষেত্রে এটা জেলা পরিষদের আভ্য়ন্তরীণ ব্যাপার। এটা একটা দলগত ব্যবস্থা। কেউ দল ছেড়ে অন্য দলে গেলেই যদি এমন করা হয়, তবে একে সার্বিক ব্যবস্থা বলা যায় না। যাঁরা যেতে চাইছেন তাঁরা চলে যান। অসুবিধা নেই। ” পাল্টা, জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, “যারা দলকে বিপদে ফেলেছে, দলের সঙ্গে বিশ্বাঘাতকতা করেছে, দলের সঙ্গে বেইমানি করেছে, তাই সদস্যপদ খারিজ হয়েছে। এর থেকে প্রমাণ হয়ে গেল দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে কীভাবে শাস্তি পেতে হয়।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি পদের নির্বাচন এখনও হয়নি। ওই দু’টি পদে কে বসবেন, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। ইতিমধ্যেই জেলায় কংগ্রেসের তথাকথিত হেভিওয়েট কিছু নেতা তৃণমূলে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারমধ্যে দু’জন প্রাক্তন বিধায়কও রয়েছেন এমন কানাঘুষোও শোনা গিয়েছে দলের অন্দরে। তবে তাঁরা কারা তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে রাজনৈতিক দলগুলি। শাসক দলের অন্দরে খবর, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসে রয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলে আসতে চাইলে দলে নিতে আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচন আবহে যাঁরা তৃণমূলকে বিপদে ফেলতে কংগ্রেসে বা অন্য দলে গিয়েছিলেন তাঁদের দলে ফেরানো নিয়েই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্য নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই চূড়ান্ত।
প্রসঙ্গত, একুশের নির্বাচনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির গড়েই শূন্য আসন লাভ হয়েছে হাত শিবিরের। জেতা আসন এভাবে হাতছাড়া হওয়ায় দলের অন্দরেই ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। অধীরের ‘একনায়কতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে সুর ঘনিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানও। কংগ্রেসের অনেক নেতৃত্বই সিপিএম ও আইএসএফের জোটকেও হারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কার্যত, মোশারফের মতো প্রবীণ বর্ষীয়ান নেতার দলবদলের প্রচেষ্টা ও অন্যান্য অনুচ্চারিত কিছু হেভিওয়েট নেতৃত্বের তৃণমূলে যোগদানের মত সম্ভাবনা কার্যত কংগ্রেসি ভাঙনকেই স্পষ্ট করছে বলে দাবী রাজনৈতিক মহলের।
আরও পড়ুন: মালদায় ‘আস্থাক্ষয়’ পদ্মের, আইনি জটিলতা কাটার আগেই পদত্যাগ জেলা পরিষদের সভাধিপতির