মুর্শিদাবাদ: এ যেন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার দশা। কে যে আসল আর কে নকল অফিসার, গুলিয়ে ফেলছেন মানুষ। সেই কসবার দেবাঞ্জন কাণ্ড থেকে শুরু। তার পর নিয়মিত ভানে রাজ্যে গ্রেফতার হচ্ছে ভুয়ো সিবিআই, ভুয়ো আইএএস, ভুয়ো বিচারক, ভুয়ো সেনা অফিসার, ভুয়ো ডিআইজি, ভুয়ো আইপিএস। এই তালিকা দীর্ঘ। এবার ভুয়োদের সেই বিশাল তালিকায় সংযুক্ত হল ভুয়ো সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স অফিসার (fake central vigilance officer)। মুর্শিদাবাদে এক চিকিৎসককে ভয় দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা আদায়ের ছক করে গ্রেফতার হলেন সেখ আরিফুল নামে এক যুবক।
জানা গিয়েছে, ভিজিল্যান্স অফিসারের পরিচয় দিয়ে এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে ৫ লক্ষ টাকার দাবি করে হুমকি দেন সেখ আরিফুল। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে দৌলতাবাদ এলাকায় আসে আদতে উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা সেখ আরিফুল। সেখানে এসে গ্রামীণ চিকিৎসক আব্দুল রাসিদ সরকারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নিজেকে ভিজিলেন্স অফিসার হিসাবে পরিচয় দেন তিনি। তার পর ওই যুবক ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন চিকিৎসকের কাছে। এদিকে প্রথমে ভয় পেয়ে কিছু টাকা দিলেও, পরে সন্দেহ হওয়ায় আতঙ্কিত ওই চিকিৎসক খবর দেন দৌলতাবাদ থানায়। এর পরই পর্দাফাঁস। মঙ্গলবার ভুয়ো অফিসার ওই চিকিৎসকের কাছে টাকা নিতে এলে পুলিশ তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
চিকিৎসক আব্দুল রাসিদ সরকারের কথায়, “গত ২২ তারিখ দুপুরে ভদ্রলোক আমার দোকানে আসেন। সামনের বেঞ্চটাতে বসেন। রোগী দেখছিলাম। ওঁনাকে ডাকলাম। তখন উনি বললেন, রোগীটা দেখে নিন। দেখা হয়ে গেলে, এখানে বসে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আছে, আপনার কেস আছে। আপনি রোগীদের কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা করে নেন। মানুষকে ঠকিয়ে নেন। অবৈধ ভাবে ইনকাম করেন।’ তার পর আমাকে উঠে দাঁড়াতে বলেন। একটা ছবি নেন।”
ডাক্তারবাবু আরও বলেন, “এর পর চেম্বারের ছবি নিচ্ছে আর বলছে, কোটি কোটি টাকার ব্যাপার তো! এই ভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বলেন, ‘আপনার লাইফ বরবাদ। সারা জীবনের মতো। বাড়ি সিল হয়ে যাবে। কোনও মতে রেহাই নেই।”
কিন্তু তিনি ওই অফিসার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে উল্টে ফের চোটপাট শুরু করেন বলে অভিযোগ। ডাক্তারবাবুর কথায়, “নাম জিজ্ঞেস করতেই একটা কার্ড দেখিয়ে বলেন, আমি সেন্ট্রালের লোক। তার পর উঠে গিয়ে বলেন, একটাই রাস্তা খোলা আছে। আপনাকে বাঁচাতে পারি, পাঁচ লাখ টাকা লাগবে।” এদিকে চিকিৎসক জানান, সব বিক্রি করেও তিনি ওই টাকা জোগাড় করতে পারবেন না। এর পর তাঁকে ফের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বলা হয়, ‘যে করে হোক টাকা জোগাড় করুন। নাহলে লাইফ বরবাদ।’ সময় দেওয়া হয় কয়েকদিন। তখনই ২ লাখ টাকা পরে ৩ লাখ টাকা চাওয়া হয়। সময় দেওয়া হয় ২৮ তারিখ পর্যন্ত।
এর পর ভয়ের চোটে কিছু টাকা দিয়ে থানায় যোগাযোগ করেন ওই চিকিৎসক। জানান, প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তাই তিনি কিছু টাকা দিতে বাধ্য হন। এর পর পুলিশের জালে ধরা পড়ে ওই ভুয়ো ভিজিলেন্স অফিসার। তাঁকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। ধৃতকে বুধবার সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন চেয়ে বহরমপুর জেলা জজ আদালতে পাঠায় দৌলতাবাদ থানা।
আরও পড়ুন: Ritabrata Banerjee: লাল ঝান্ডাকে বাঁচাতে চাইলে মমতার হাত শক্ত করুন