মুর্শিদাবাদ: হাসপাতালে বেড সঙ্কুলান। ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ভিতরেই মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে থাকতে। কিন্তু কোথায় থাকবেন, বুঝে উঠতে পারেননি রোগীরা। তাই শীতের মধ্যে হাসপাতালের বাইরেই রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। এমনই দৃশ্য ধরা পড়ল মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল ভবনের বাইরে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন প্রায় জনা বিশেক রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। ঢালাই করা চাতালের উপর চাদর পেতে গায়ে কাঁথা-কম্বল চাপিয়ে শুয়ে রয়েছেন রোগীরা।
রোগীর পরিজনরা বলছেন, সকাল আটটার সময় রোগী এসেছে। সন্ধে ৬টার চিকিৎসক রোগী দেখা শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক রয়েছেন একজনই। ফলে তাঁর সমস্যার দিকটিও বুঝতে পারছেন রোগীর পরিজনরা। একজন চিকিৎসক আর এতজন রোগী। বাস্তব চিত্রটি বুঝতে পেরেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা শীতের মরশুমে এভাবে অপেক্ষা করতে হওয়ায় বেশ সমস্যায় রোগী ও তাঁদের পরিজনরা। তাঁরা বলছেন, হাসপাতালে বেড নেই। তাই বাইরেই থাকছেন।
অন্য এক রোগীর পরিজন বলছেন, লাইগেশন করানোর জন্য আনা হয়েছিল রোগীকে। সেই সকাল থেকে বাইরেই পড়েছিলেন। অপারেশনের জন্য ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর আবার বাইরেই ঠাঁই হয়েছে তাঁদের। এমন অবস্থায় এত ঠান্ডার মধ্যে রোগীদের বাইরে পড়ে থাকায় বেশ চিন্তিত রোগীর পরিজনরা। বলছেন, “এখন যদি কিছু হয়ে যায়, তার দায় কে নেবে?”
যদিও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সজল পণ্ডিত জানাচ্ছেন, “আজ তো কম, এর থেকেও বেশি রোগী হয়। এই বারান্দায় এবং ভিতরের অন্যান্য জায়গায় যা হোক করে অ্যাকোমোডেট করে থাকার জন্য বলা হয়েছিল। ভিতরে যথেষ্ট জায়গা আছে। কিন্তু ওরা থাকবে না। বললে, জোর করেও আনতে পারবেন না।” চিকিৎসকের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবেই বাইরে থাকছেন তাঁরা। কিন্তু কেন তাঁরা বাইরে থাকছেন শীতের মধ্যে? চিকিৎসক বলছেন, যখন বলা হয়েছিল, তখন নাকি ওরা বলছে, ওরা বাইরেই ভাল আছে। কারণ, তাদের ঢুকতে-বেরোতে-খেতে সুবিধা হয় তাতে। তাঁর বক্তব্য, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেড কম। ১৫-৩০ বেডের হাসপাতাল। এমন অবস্থায় প্রত্যেকের জন্য বেড দেওয়া যায় নাকি? আমার এমনিই ডায়েরিয়া, ডেলিভারি রোগী ভর্তি।’ তিনি বলছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওয়ার্ড ও বেড সংখ্যা বাড়ালে ভাল হয়। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেডের থেকে রোগী সংখ্যা বেশি হওয়ার সমস্যা দীর্ঘদিনের বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক সজয় পণ্ডিত।