মুর্শিদাবাদ : এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে পড়ার জোগাড়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই যেন এই প্রবাদবাক্যটাই তুলে ধরছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আবাস যোজনায় (Pradhan Mantri Awas Yojana) যোগ্য ঘর প্রাপকদের তালিকা তৈরির জন্য বিগত কয়েকদিন ধরে জোরকদমে শুরু হয়েছে সার্ভে। সরকারি কর্মীদের হাত ধরে চলা সেই কাজে অস্বস্তি বেড়েছে সরকারেরই। অভিযোগ, রাজ্যের নানা গ্রামে এই যোজনার সার্ভে করতে বাধা দিচ্ছেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) নেতারা। কোথাও আবার অযোগ্যদের নামও জোর করে প্রাপক তালিকায় ঢুকিয়ে দিতেও বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সরকারি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে রাস্তায় নেমেছেম আশাকর্মীরা। এবার আবাস যোজনার ঘর না পাওয়ায় বিক্ষোভে সামিল হলেন মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ব্লকের মালঞ্চা এলাকার বাসিন্দারা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁরাই আসলে ঘর পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, তাঁদের আবাস যোজনার পাকা ঘর দেওয়া হচ্ছে না। সে কারণেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিক্ষোভের পথ নিয়েছেন তাঁরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন দিনভর ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়। গ্রামবাসীদের অনেকের দাবি, ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের অনেকের কাছ থেকে টাকাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এখন দেওয়া হচ্ছে না ঘর। এক আন্দোলনকারী মহিলা বলেন, “ছবি তুলে গিয়েছে। কথা বলে গিয়েছে। বারবার কাগজ জমা দিচ্ছি, কিন্তু তারপরেও কোনও কাজ হচ্ছে না। আমরা কীভাবে থাকি দেখবেন চলুন। যাঁদের চাকরি আছে, সব আছে তাঁরা বাড়ি পাচ্ছে। আমরা কেন পাব না? কেন তালিকা থেকে আমাদের নাম নেই? প্রয়োজনে আমরা আরও বড় আন্দোলন করব।” এই ইস্যুতে ইতিমধ্য়েই শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।
উত্তর মুর্শিদাবাদের বিজেপির সংগঠনিক জেলা সম্পাদক ইন্দ্রনাথ উপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেখানে দুর্নীতি আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তৃণমূল সরকারের হাত ধরেই এটা হয়েছে। তৃণমূলের ছোট, বড়, মেজো, সেজো সমস্ত স্তরের নেতারাই আজ কোনও না কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আবাস যোজনাতেও আজ ব্যাপকহারে দুর্নীতি হচ্ছে। এই দুর্নীতি রুখতেই এখানে ৮ মাস কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বন্ধ রেখেছিল। প্রধানমন্ত্রীর নামে থাকা প্রকল্প বাংলা আবাস যোজনা বলেও চালানো হচ্ছিল। এই প্রকল্পে প্রতিটা তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ হয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিরা বাড়ি পাচ্ছে না। যাঁরা পিছন থেকে টাকা দিচ্ছেন, বড়লোক, তাঁরা বাড়ি পেয়ে যাচ্ছে।”
গাজিনগর মালঞ্চা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান সীমন্ত দাস বলেন, “যেখানে আজ আন্দোলন হয়েছে সেখানে দেড়শোর উপরে বাড়ি রয়েছে। যাঁরা প্রকৃত বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাঁদের খোঁজ নিতে, তাঁদের অবস্থা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই সরকারি টিম চলে গিয়েছে। যাঁরা পাওয়ার যোগ্য তাঁরা পাবে। আমি যতদূর জানি বাড়ির জন্য কারও থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি।”