মুর্শিদাবাদ: বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) যে কেন্দ্রগুলিতে নির্বাচন বাকি রয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম হল সামশেরগঞ্জ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বঙ্গ উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরেই সামশেরগঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী জৈদুর রহমান নির্বাচনে লড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে কার্যত তাঁর ‘ওয়াকওভার’ করার পর কংগ্রেসের (Congress) তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানান, প্রার্থী না দিতে পেরে তিনি দুঃখিত। তবে জৈদুর যাতে নির্বাচনে অংশ নেন তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। তাহলে কি অধীরের অপূর্ণ সাধ-ই এ বার পূরণ হতে চলেছে? বৃহস্পতিবার, নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে এমনই একটি পোস্ট করে জল্পনা উসকে দিলেন খোদ কংগ্রেস প্রার্থী জৈদুর।
নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে জৈদুর লেখেন, “এই খেলা কিন্তু সকলকেই খেলতে হবে।” এই লেখা পোস্ট করার অল্প সময় পরেই আরও একটি পোস্ট দেন জৈদুর। তাতে লেখা, “জাতীয় কংগ্রেস মনোনীত জনসাধারণের প্রার্থী জৈদুর রহমানকে হাত চিহ্নে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করুন।” নীচে, জৈদুর রহমানের ছবি, সঙ্গে প্রতীক কংগ্রেসের। আর এই দুটি পোস্টেই কার্যত জল্পনা উসকে দিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। যদিও, দ্বিতীয় পোস্টটি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই জৈদুরের প্রোফাইল থেকে উধাও হয়ে যায় সেটি।
যদিও, জৈদুরের সোশ্যাল মিডিয়ায় এ হেন পোস্টে খুশি জেলা কংগ্রেস। দক্ষিণ মালদার কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেন খান চৌধুরী বলেন, “আমরা তো বলেইছিলাম জৈদুর বিবেচনা করে দেখুন। ওঁ বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা খুশি। আমরা জিতবই।” সামশেরগঞ্জের ব্লক সভাপতি কংগ্রেস প্রার্থীর নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে খোদ কংগ্রেস নেতা জৈদুর কোনও মন্তব্য় করেননি।
জৈদুর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর দলের অন্দরে গুঞ্জন ওঠে, প্রার্থীর দাদা জঙ্গিপুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি। জৈদুর কংগ্রেস প্রার্থী হওয়ায় পারিবারিক ব্যবসাতেও ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া দলবদলের মরসুমে জৈদুরের নজর ঘাসফুল শিবিরেই। ফলে, নির্বাচনে ‘না’ কংগ্রেস নেতার। জৈদুর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনতিপরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
নিজগড়েই প্রার্থী দিতে না পেরে স্পষ্টই ঘোষণা করেন, সমশেরগঞ্জে কংগ্রেস নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তিনি দুঃখিত। পাশাপাশি অধীর এও বলেন, “আমি আশা রাখি জৈদুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আমি নিজে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি সমশেরগঞ্জে কংগ্রেস নির্বাচনে লড়াই করতে পারবে।”
বিধানসভা নির্বাচন আবহে, গত ১৫ এপ্রিল এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সামশেরগঞ্জে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২৬ এপ্রিল। কিন্তু প্রার্থীর মৃত্যু ঘটায় নির্বাচন স্থগিত হয়। পরে গত ১৩ মে ওই কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, সেদিন ইদ উত্সব থাকায় সংখ্য়ালঘুরা ভোট দিতে অস্বীকার করেন। ফলে থমকেই ছিল নির্বাচন।
বরাবর কংগ্রেসের ঘাঁটি বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলাতে বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন লাভ হয়নি বাম-কংগ্রেসের। কার্যত, সবুজ ঝড় ‘অধীর গড়ে’। উপরন্তু, নির্বাচন আবহে সামশেরগঞ্জে জোট নিয়েও সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সংযুক্ত মোর্চার ফর্মূলা অনুযায়ী, সামসেরগঞ্জ আসনটি সিপিএমের জন্য বরাদ্দ হলেও সেখানে কংগ্রেসও তাদের প্রার্থী ঘোষণা করল। যা নিয়ে জোর চাপানউতোর শুরু হয় মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক মহলে। যদিও পরে এই কেন্দ্রে কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে রাজি হয় সিপিএম।
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: টিকা নিয়ে রক্তারক্তি, বঙ্গ জুড়ে অনিয়ম, গাফিলতি কোথায়?
আরও পড়ুন: Arjun Singh: সাংসদের বাড়িতে বোমাবিস্ফোরণ-কাণ্ডে ঘটনাস্থলে NIA-র ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল