মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুর্শিদাবাদ: শুক্রবার সকালে সামশেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এরপরই প্রশাসনিক সভায় যোগ দিয়ে পাট্টা বিলি করেন তিনি। এদিন মোট ৮৬ জনের হাতে পাট্টা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “বৃহস্পতিবারই মালদহ-মুর্শিদাবাদ নিয়ে প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং হয়েছে। আজ আমি সামশেরগঞ্জটা নিজে চোখে দেখব বলে এসেছিলাম। লালগোলা, ভগবানগোলা, ধুলিয়ান, সুতি অনেকবার গিয়েছি।” এদিন আরও একবার ফরাক্কার সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়ছে। নদীতে স্রোত ও চড়া বেড়েছে। ফরাক্কা ব্যারেজ সংক্রান্ত সমস্যা অনেকদিনের। আমরা বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা দিল্লির সাবজেক্ট। আমাদের নয়। তা সত্ত্বেও আমরা অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু ওরা আমাদের কোনও সাহায্য তো করেইনি। উল্টে ইন্দো ফরাক্কা বাংলাদেশ জলচুক্তি যখন হয়, ৭০০ কোটি টাকা রাজ্যের পাওয়ার কথা ছিল, এলাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য, এক পয়সা আজ পর্যন্ত দেয়নি। হয়ত ২০ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে।” একইসঙ্গে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের ১২ বছর পূর্ণ হল। ২০১১ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রথমবার শপথ নেন মমতা। এরপর ‘হ্যাট্রিক’। এই দিনটির জন্য বাংলার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
যা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- এজেন্সি দিয়ে কোনও কাজ হবে না। আমি সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বলব, এক হয়ে যাও। ১:১ লড়াই করুক। যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়ুক। আমার কোনও সমস্যা নেই। : মমতা
- কেউ নিজেকে দেশের নেতা বললেই নেতা হওয়া যায় না। মানুষ যাকে নেতা বলেন, সেই নেতা। : মমতা
- দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদে আপনারা অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম দিয়েছেন। অনেক নেতারা বড় বড় কথা বলেছেন। কিন্তু একটা কাজ আজ পর্যন্ত করতে পারেনি। ফলে কাজটা আমাদেরই করতে হবে। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোট। বলে দিয়েছে, চব্বিশ সাল পর্যন্ত বাংলাকে কোনও টাকা দেবে না। বাংলা লড়াই করে বলে দেবে না। : মমতা
- কেন্দ্র টাকা না দিলেও এই গঙ্গা ভাঙনের কাজে আমরা ইতিমধ্যেই ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। জঙ্গিপুরে নতুন হাসপাতাল হচ্ছে। আরও অনেক কিছু। ফরাক্কায় তো আমরা করতেই চাই। কাল সামশেরগঞ্জে ৩০০ বেডের হাসপাতাল মাতৃমা উদ্বোধন করা হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের আর দূরে যেতে হবে না। আরও কাজ করা হবে। চিন্তা করবেন না। আমরা সাধ্যমতো করব। : মমতা
- রাজ্য পরিবেশ দফতর ৫০ কোটি এবং সেচ দফতরের খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এক বছরের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। ১০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে করতে হবে। : মমতা
- ৫ মে। আজ আমার ১২ বছর পূর্ণ হবে মুখ্যমন্ত্রীর। আমি প্রণাম জানাই বাংলার মানুষকে। আমার কোনও দিন রেস্ট নেই, কোনও ছুটি নেই। আমার একটাই কাজ মানুষের জন্য কাজ করা। : মমতা
- গতকাল ৫০ কোটি টাকা সামশেরগঞ্জের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল, পরিস্থিতি অনেকটাই ভয়াবহ। তাই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। : মমতা
- আমি এলাকার মানুষজনকে বলব, নদী থেকে বাড়ি দূরে তৈরি করুন। পাঁচ কিমি অন্তত। একটু দূরে তৈরি হলে বাড়ি ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। : মমতা
- পর্যটনে মুর্শিদাবাদ জেলা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সমস্যা গঙ্গা ভাঙন। আমি নীতি আয়োগকেও বলেছি। আমি মুখ্যসচিবকেও বলব, ফরাক্কা ব্যারেজ ড্রেজিং করে না। পলি পড়ে যায় একদিকে, আরেকদিকে জল। দূরে দূরে বাড়ি করবেন। : মমতা
- ১০ কোটি কর্মদিবস করেছি। আমরা আমাদের রাজ্য সরকার থেকে ৪০ লক্ষ লোককে ১০০ দিনের কাজ দিতে পেরেছি। সব জেলাশাসক, পঞ্চায়েত, ডিএমদের বলব, যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করে টাকা পাননি, কাজ দিন বেশি করে। : মমতা
- ১০০ দিনের কাজে খাটিয়েছে টাকা দেয়নি। অথচ এই টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যে সরকার ১০০ দিনের কাজে পরপর ৫ বছর প্রথম হলাম, একটা টাকা দেয়নি। আমি জেনেশুনে কখনও মিথ্যা বলি না। আমি অন্য নেতাদের মতো নই। আমি একজন সাধারণ কর্মী। সাধারণ মানুষ। মিথ্যা বলে রাজনীতি আমার নেশাও নয়, পেশাও নয়। সমাজসেবার জন্য রাজনীতি করি। : মমতা
- ২০২৩-২৪ এ লোকসভা নির্বাচনের আগে বলবে গ্যাস দেব, এই দেব, ওই দেব, কিন্তু কিছু দেবে না। : মমতা
- দেবগৌড়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন জলচুক্তি হয়েছিল। গঙ্গা ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দেখার প্রকল্প। ওরা যত রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায়, প্ররোচনা নিয়ে মাথা ঘামায়, যদি মাথাটা সঠিক কাজে ব্যবহার করত, তাহলে এই প্রকৃতি কিন্তু রূপসী বাংলা রূপে আরও রূপান্বিত হতে পারত। : মমতা