রানিনগর: আগামী মাসে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কর্মী সিজারুল শেখের। কিন্তু তার আগেই রাজনৈতিক হানাহানির বলি হতে হল তাঁকে। ছেলেকে হারানোর পর পুলিশের উপর ক্ষোভ উগরে দিলেন সিজারুলের মা-বাবা। বললেন, “প্রশাসন যদি সত্যি থাকত তাহলে আমার ছেলেকে বলি হতে হত না।”
উল্লেখ্য, নির্বাচনের দিন ভোট দেওয়ার পর বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূল কর্মী সিজারুল। অভিযোগ, সেই সময় কংগ্রেস সিপিএম এবং বিজেপির আশ্রিত দুষ্কৃতীদের যৌথ আক্রমণে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সিজারুল। মাটিতে লুটিয়ে থাকা অবস্থাতেই তাঁকে লাঠি এবং রড দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু হয়। এর বেশ কিছুক্ষণ পর এই ঘটনার খবর পেয়ে সিজারুলের দাদা এবং অন্যান্য তৃণমূল কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ওই জখম যুবককে উদ্ধার করেন। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় রানিনগর হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেই সময় কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিজারুলকে পরিজনরা কলকাতার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের কারণে অবরোধে বসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। তাতে আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স এবং ওই যুবককে ফিরিয়ে আনা হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই রবিবার রাতে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
ঘটনার পর থেকে ভেঙে পড়েছেন ওই যুবকের বাবা-মা বোন দাদা এবং বৌদি। সমানতালে কেঁদে চলেছে সিজারুলের একমাত্র কিশোর ভাইপোও। দাদুকে জড়িয়ে কেঁদেই চলেছে সে। কেরালায় কাজ করতেন সিজারুল। বাবাকে সাহায্য করতে হবে চাষবাসের কাজে সেই কারণে তিন বছর আগে ফিরে এসেছিলেন। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী না হলেও মাঝেমধ্যে মিছিলে দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু এমন ঘটনা নির্বাচনের দিন ঘটে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যুবকের পরিজন বা পাড়ার বাসিন্দারা।
এদিন বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির প্রতিটি পরিজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। সিজারুলের আত্মীয় পরিজনদের সান্তনা জানাতে বাড়িতে আসেন কাতলামারি ২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান তথা এবারের পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন,”এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি আমাদের এলাকায়। কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি যৌথভাবে সন্ত্রাস করছে। নৃশংসভাবে মারধরে বলি হতে হল আমাদের পাড়ার যুবককে।”