নদিয়া: হাঁসখালিকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (CBI) আধিকারীকরা ডেকে পাঠালেন মূল অভিযুক্তর বাবাকে। মঙ্গলবার সকাল এগারোটা পঞ্চাশ নাগাদ অটো চড়ে সিবিআই-এর অস্থায়ী ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্য। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি, মারধর সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। শুধু তাই নয়, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ঘটনার প্রথম দিন থেকেই নিজের প্রভাব খাটিয়ে গণধর্ষণের প্রমাণ লোপাটের করার মত মারত্মক অভিযোগ উঠছিল অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান সহ পরিবারের বিরুদ্ধে। তাঁর প্রভাবের জন্যই অনেকে নাকি ঘটনার বিষয়ে জানার পরও মুখ বন্ধ করে রাখেন ওই এলাকায়। এরপর নির্যাতিতা মেয়েটির শেষকৃত্য করতেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। নিজের প্রভাব খাটিয়ে নির্যাতিতা মেয়েটির শ্রাদ্ধের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল সে এমনটাই দাবি করেন নির্যাতিতার পরিবার। এবার সেই পঞ্চায়েত প্রধানকে সিবিআই ধরতেই তদন্তে যে আরও একাধিক নতুন তথ্য উঠে আসবে তা মনে করা হচ্ছে।
শুধু এই ব্যক্তি নয়, সিবিআইএর জালে ধরা পড়ে আরও তিন অভিযুক্ত। রবিবার ধৃতদের রানাঘাট আদালতে তোলা হলে চারদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাঁসখালির নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে একটি অডিয়ো রেকর্ড ভাইরাল হয়, সেখানে ধৃতদের মধ্যে দু’জনের কথোপকথন ছিল। সূত্রের খবর, এই তিনজনের বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাট, হুমকি দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে। এরপরই তাঁদের খোঁজে ছিল তদন্তকারীরা। এই নিয়ে মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হল এই ঘটনায়। এরমধ্যে ৪ জনকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে।
প্রসঙ্গত, হাঁসখালিতে এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি থেকে ফেরার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। সেদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়। ভোরের আলো ফোটার আগে দেহ দাহও করে ফেলে পরিবার। ৫ এপ্রিলের ঘটনা। এরপর প্রায় সপ্তাহ ঘোরার মুখে প্রথমবার সামনে আসে বিষয়টি। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠে। পরিবারকে হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে রাখা, রাতারাতি দেহ দাহ করানোর জন্য বাধ্য করার মতোও অভিযোগ ওঠে। পুলিশি তদন্তের বদলে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের কথা বলে। একইসঙ্গে হাঁসখালির নির্যাতিতার পরিবার ও তার সাক্ষীদের নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা রাজ্যকেই করতে হবে বলে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
গত ১২ এপ্রিল এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে একাধিকবার ঘটনাস্থলে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। নিহতের পরিবার, পরিচিতদের বয়ান রেকর্ড হয়েছে। শ্মশানস্থল, বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে নমুনা। বেড়েছে গ্রেফতারির তালিকাও। সিবিআই তদন্ত ভার নেওয়ার পর প্রথমে দুই ধৃতকে পুলিশের হাত থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এরমধ্যে তৃণমূল নেতার ছেলেও রয়েছে। তাদের জেরা করেই উঠে আসে একের পর এক নাম। রবিবার তিনজনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। অভিযোগ, এই তিনজন শ্মশানে দাহ করার ক্ষেত্রে জোর খাটিয়েছিল। এমনকী নিহতের পরিবারকে হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Maoist Poster in Bankura: ‘টিএমসি নেতাদের সঙ্গে খেলব’, সাত সকালে সারেঙ্গায় মিলল মাওবাদী পোস্টার…