নদিয়া: হাঁসখালির ‘গণধর্ষণ’ কাণ্ডে উঠে আসছে এলাকার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার ছেলের নাম। বাবার নাম ভাঁড়িয়েই সে নাকি এলাকায় ‘রোয়াব’ নিয়ে ঘুরে বেড়াত। তার বিরুদ্ধে উঠেছে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ। মৃত্যুর পর দেহ দাহ করা হয়েছে জবরদস্তি। অভিযোগ তেমনটাই। ঘটনা গত সোমবারের। তারপর কেটেছে চার দিন। এ ক’টা দিন ঘটনা চেপে দিতে পরিবারের ওপর চাপ বাড়িয়েছিল অভিযুক্ত। শেষমেশ গত শনিবার, ৯ তারিখ চাইল্ড লাইনের সহযোগিতায় হাঁসখালি থানায় অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতার পরিবার। তারও ২৪ ঘণ্টা পর এফআইআর নেয় পুলিশ। তারপর গ্রেফতারি। TV9বাংলা সেই খবর করতে যায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যাচ্ছে, অভিযুক্তের বাবা এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য। তার আগে এর আগেও এলাকায় গুন্ডামির অভিযোগ উঠেছে। গ্রামের পূর্ব প্রান্তে টিনের চালের একটানা বাড়ি। সামনে অনেকটা জায়গা। ছেলের গ্রেফতারির পর থেকেই সপরিবারে বাড়ি থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছেন তিনি। কোথায় গিয়েছেন, প্রতিবেশীরা কেউই বলতে পারছেন না। কিংবা বলতে চাইছেন না। অত্যন্ত সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়েছেন বাড়ির গা লাগোয়া এক বাড়ির সদস্য। ওই মহিলার কথায়, “আমরা দিঘা গিয়েছিলাম। ফিরে তো দেখছি ওরা নেই। কী করে বলি বলুন তো।” অভিযুক্তের বাড়ির উঠোনেই দাঁড়িয়েছিলেন এক মহিলা। ঘটনার কথা জিজ্ঞাসা করতেই জানিয়েছেন, তাঁর কিচ্ছু জানা নেই।
অভিযুক্ত ত়ৃমমূল নেতা এলাকার প্রভাবশালী নেতা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি দল। এলাকায় তার প্রভাব বেড়েছে আরও। তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ভয় মুখ খুলছেন না কেউই। ক্যামেরা দেখে সবাই এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে এক প্রৌঢ়া বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “এই এলাকার সবাই তটস্থ ওদের ভয়ে। ছেলেটার বাবা তো ডন, আমার ছেলেকে মেরেছে, এই পাড়ায় কেউ মুখ খুলবে না ওর বাবার ভয়ে। ওরা বাবা তো ডন, পিস্তল নিয়ে ঘোরে। কতজন পিস্তলের গুলি খেয়েছে। ছেলের কাছেও পিস্তল থাকে, বাবার কাছেও থাকে।”
তাঁর কথাতেও উঠে আসে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আরও এক অভিযোগ। এলাকার কোনও এক মেয়ের সঙ্গেও নাকি এমনটা হয়েছে আগে। এটা অবশ্য ওই মহিলা দাবি করেছেন।
দলের নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কল্লোল খাঁ বলেন, “আমি এই মুহূর্তে কলকাতায় আছি। আমার পক্ষে এখনই সবটা বলা সম্ভব নয়। যদি ঘটনা সত্য, আইন আইনের পথে চলবে। ওখানকার সভাপতি রত্না ঘোষ করের কাছে গোটা বিষয়টির রিপোর্ট চেয়েছি। তাঁকে খোঁজ খবর করতে বলেছি। স্থানীয় ব্লক সভাপতিকেও খোঁজ নিতে বলেছি। অভিযোগ সত্য হলে দল তার ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে।” এবার তৃণমূল নেতাকে TV9 বাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, ‘অভিযুক্ত তো আপনাদের দলের সদস্য, ও দলের কোন পদে রয়েছেন?’ কল্লোল খাঁর জবাব, “তৃণমূল নেতা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। এমনটাই শুনেছি, সবটা ওর ব্যাপারে জানি না।” ফের প্রশ্ন, তাঁর বিরুদ্ধে তো আগেও অভিযোগ উঠেছে। দল কী কোনও পদক্ষেপ করেছে? এক্ষেত্রে তাঁর একই উত্তর, দল অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করবে।
বিজেপি বিধায়ক মুকুলমণি অধিকারী বলেছেন, “বাংলায় নৈরাজ্য চলছে। এটা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। আমার বাড়ির খুব কাছাকাছি ঘটনাটা ঘটেছে। এটা হতাশাজনক ঘটনা।”
আরও পড়ুন: TMC Party Office: তৃণমূলের পার্টি অফিসে ‘মেয়ে নিয়ে আড্ডা, মদ-জুয়ার আসর’, বিস্ফোরক দলেরই কাউন্সিলর