মাজদিয়া: জামাইয়ে বয়স ষাট পেরিয়েছে। শাশুড়ির বয়সও একশো ছু়ঁইছুঁই। তাতে কী! এই বয়সেও সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান মেনে ষাটোর্ধ্ব জামাইকে ষষ্ঠীর বরণ করে নিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ একশো ছুঁইছুঁই শাশুড়ি। জামাইষষ্ঠীর দুপুরে এই দৃশ্যই ধরা পড়ল নদিয়ার মাজদিয়ায়। বয়স হয়েছে বটে বৃদ্ধার। কিন্তু এই বয়সেও একাই হাঁটাচলা করেন। জামাইষষ্ঠীর দিনেও তাতে কোনও নড়চড় নেই। নিজেই সব ফলাহার গুছিয়ে জামাই বিনয়কুমার পোদ্দারকে বরণ করে নিলেন মাজদিয়ার ফুলিতা দা।
বয়স বাড়লেও, রীতি-রেওয়াজে এতটুকুও ভাটা পড়তে দেননি ফুলিতা দেবী। এখনও প্রতি বছর জামাইষষ্ঠীর দিন নিয়ম করে জামাইকে বরণ করেন। আজও সেই রীতি-রেওয়াজে কোনও ব্যতিক্রম নেই। দই, চিড়ে, আম, কাঠাল, কলা দিয়ে ফলাহার সাজিয়ে জামাইকে বরণ করে নিলেন বৃদ্ধা। সব নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে। গঙ্গাজল-সহ পানের পাতা দিয়ে বরণ করলেন মেয়ে-জামাইকে। ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করলেন মেয়ে-জামাই, নাতিকে। তালপাতার হাত পাখা দিয়ে হাওয়া করলেন জামাইকে। কাঁসার থালায় সাজিয়ে দিলেন গোটা ফল। ষাটোর্ধ্ব জামাইকে খাওয়ালেন দই-মিষ্টি।
এই বয়সে এসেও জামাইষষ্ঠী পালন কেন? বৃদ্ধা ফুলিতা দাঁ কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “এখনও বেঁচে আছি। তাই জামাইষষ্ঠী করি এখনও। সবাইকে আশীর্বাদ করি। ওরা সুখে-শান্তিতে থাকুক। পাঁচ রকম মিষ্টি দিয়ে জামাইষষ্ঠী করেছি। একটা জামা দিয়েছি জামাইকে। এই বয়সেও যে জামাইষষ্ঠী করতে পারছি, এটাই আমার জন্য অনেক।” ষাট বছর বয়স পেরিয়ে এসেও জামাইষষ্ঠী পাওয়ায় খুশি বিনয় পোদ্দারও। বলছেন, ‘এই বয়সেও শাশুড়িমা জামাইষষ্ঠী করছেন, এটা আমার সবথেকে বড় সৌভাগ্য।’