নদিয়া: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার (Post Poll Violence) তদন্ত চলছে পুরোদমে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলায় জেলায় গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি ধড়পাকড়ও চলছে। এ বার, গাঙনাপুরে বিজেপি কর্মী উত্তম ঘোষকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় প্রায় সাত মাস পরে ভোলানাথ বিশ্বাস নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
সিবিআই সূত্রে খবর, ভোলানাথ বিশ্বাস ওরফে ভোলা নামের ওই অভিযুক্তকে সোমবার গাঙনাপুর থেকেই গ্রেফতার করেন সিবিআই কর্তারা। ভোলানাথ ছাড়াও গাঙনাপুর থানা বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এদিন, ভোলানাথকে রানাঘাট মহকুমা আদালতে তোলা হয়। আদালতের তরফে ধৃতকে সাতদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভোলানাথের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি
বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই নদিয়া জেলা জুড়ে হিংসাত্মক ঘটনা খবর মেলে। গাঙনাপুর থানার দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা উত্তম ঘোষ চাষের কাজ করতেন। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন। ভোটের ফল ঘোষণার রাতে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় বিজেপির মুকুটমণি অধিকারী জিততেই উত্তম ঘোষের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা উত্তম ঘোষকে খুন করেছে বলে অভিযোগ করে পরিবার। ওইদিন রাতে উত্তম ঘোষের বাড়ির কাছে তাঁর ওপর ইট, লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। উত্তম ঘোষ প্রাণ বাঁচাতে একটি বাড়িতে ঢুকে গেলে সেই বাড়িও ভাঙচুর করে তাঁকে টেনে বার করে আনা হয়। তারপর এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। বিবেকানন্দ পল্লিতে মৃত্যু হয় বিজেপি কর্মীর। ঘটনার তদন্তে নামে গাঙনাপুর থানার পুলিশ। তবে কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি।
একুশের ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ উঠেছিল বেশ কয়েকটি। তার মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগই করে বিজেপি। তারা অভিযোগ করে, বহু ক্ষেত্রে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে। শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করতে অনীহা দেখিয়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। এর পর গত ১৯ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
ইতিমধ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই এবং সিটকে নতুন করে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘরছাড়া রাজনৈতিক কর্মীদের তালিকাও চান বিচারপতি।
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট আগেই জমা দিয়েছিল রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। একমাস পুরনো হয়ে গিয়েছে সেই রিপোর্ট। তাই বর্তমানে সেই তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে, কত দূর এগোল, তা জানতেই নতুন রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট। সিবিআই তদন্তে জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মোট ৪০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে।
ইতিমধ্যেই এই মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার আবেদনে জানিয়েছিল, রাজ্যের অনুমতি না নিয়েই তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। এই মর্মে রাজ্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সেই মামলায় কেন্দ্রের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিবিআইকে তদন্তের অনুমতি দেওয়ার বা সিবিআই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই রাজ্যের।