Panchayet Pradhan Resign: অভিষেকের নির্দেশে ইস্তফা প্রধানের, অভিযোগের সত্যতা নিয়ে কী বলছেন তাতলার বাসিন্দারা

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Dec 18, 2022 | 5:34 PM

Nadia News: হুদা গ্রামের সন্ধ‍্যামণি সর্দার, দিলীপ সর্দার, পার্বতী সর্দাররাও সরকারি ঘর থেকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের কথায়, বারবার আশ্বাস পেয়েছেন।

Panchayet Pradhan Resign: অভিষেকের নির্দেশে ইস্তফা প্রধানের, অভিযোগের সত্যতা নিয়ে কী বলছেন তাতলার বাসিন্দারা
তাতলা পঞ্চায়েত এলাকা।

Follow Us

নদিয়া: পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। সেই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইস্তফাপত্রে সই করেন নদিয়ার (Nadia) তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান পার্থপ্রতিম দে। তবে ইস্তফা দেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি দাবি করে গিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তি নেই। তিনি নিয়মিত এলাকায় যান, সমস্ত খোঁজ খবর রাখেন। কিন্তু তাঁর এই দাবি কি সত্য? নাকি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) কাছে যে অভিযোগ গিয়েছে তা সত্যি? তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় খোঁজ নিয়ে উঠে এল একাধিক তথ্য। শনিবার রানাঘাটে সভা ছিল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সভামঞ্চ থেকে অভিষেক তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। অভিষেক জানান, তাঁর কাছে দিন চারেক আগেই অভিযোগ গিয়েছিল, এই প্রধান চার বছর ধরে এলাকায় যান না। মানুষের পাশে থাকেন না। যদিও প্রধান পার্থপ্রতিম দে শনিবারই দাবি করেছিলেন, “নয় নয় করে গত চার বছরে আমি ২০০ বার ওই গ্রামে গিয়েছি। আমি প্রধান হওয়ার পর ওই গ্রামেই প্রথম পঞ্চায়েতের বার্ষিক সভা হয়েছিল। তাই তথ্য়টা ঠিক নয়। তবে আমি দলের অনুগত সৈনিক, প্রথম দিন থেকে দল করি। তাই দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা মাথা পেতে মেনে নেব।” শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই নিজের ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি।

চাকদহ থেকে পায়রাডাঙা যেতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পশ্চিম দিকে মহানালা গ্রাম, পূর্বদিকে হুদাগ্রাম। চাকদহ বনগাঁ রাজ‍্য সড়কের পাশে মশড়া এবং মথুরাপুর গ্রাম। এই চারটি গ্রাম নিয়েই তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েত। হুদা গ্রামে প্রায় ১৫০০ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে ১০০ জন আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। অন্যান্য সম্প্রদায় মিলিয়ে বাকি ১৪০০। অভিযোগ, এখানে ১০০টি পরিবার আবাস যোজনার ঘর পায়নি।

মহানালা গ্রামে ১২০০ মানুষের বাস। এখানে প্রায় ৮০০ জন আদিবাসী রয়েছেন। অন‍্যান‍্য সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ৪০০র কাছাকাছি। এখানেও ১০০টি পরিবার আবাস যোজনার ঘর পায়নি বলে অভিযোগ। অন্যদিকে মশড়া, মথুরাপুর মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ১৬০০। তফশিলি জাতির মানুষই প্রায় ১ হাজার। অন্য়ান্য সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় ৬০০ জন। এখানেও শতাধিক পরিবার ঘর না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে।

মশড়া থেকে মথুরাপুর তিন কিলোমিটার দূরত্ব। যে রাস্তাটি ছিল, ২০০৯ সালের পর থেকে তাতে আর হাত পড়েনি। এখানকার মানুষের জীবন জীবিকা চলে চাষবাসের উপর। মশড়া অঞ্চলে চম্পা দুর্লভের অভিযোগ, বেশ কয়েকবার লোকজন এসে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছেন। তবে বাড়ি পাননি আজও।

বাড়ি পাননি অসীম বাগ। তাঁর অভিযোগ, মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে, অথচ আজ পযর্ন্ত বাড়ি পাননি। এই এলাকায় ২০-৩০ শতাংশ মানুষের নিজস্ব জমি আছে। ২০ শতাংশ মানুষ চাকরি ও অন্যান্য পেশায় যুক্ত। বাকি ৫০ শতাংশ মানুষ দিনমজুর।

হুদা গ্রামের সন্ধ‍্যামণি সর্দার, দিলীপ সর্দার, পার্বতী সর্দাররাও সরকারি ঘর থেকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের কথায়, বারবার আশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু আসলে মেলেনি কিছুই। বাড়ির সামনে টাইম কলের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে সে কলে যে জলই পড়ে না, তা নিয়েও পঞ্চায়েতের কোনও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ।

সিপিএমের চাকদহ ব্লকের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি দেবনাথ সিংহরায় বলেন, তাতলা-১ গ্রামপঞ্চায়েতের মহানালা, হুদা, মশড়া এবং মথুরাপুর অঞ্চলে কোনও উন্নয়নই হয়নি। হুদা, মহানালায় জলের কল আছে অথচ জল নেই। ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময় এখানকার রাস্তা মেরামতের কাজ হয়েছিল। তারপর থেকে কেউ উঁকিও মারেননি।

হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকারের কটাক্ষ, “যা অবস্থা তাতে বাংলার ৯৫ শতাংশ প্রধানকেই এই মুহূর্তে বরখাস্ত করা দরকার। আমার বিধানসভায় গিয়ে দেখুন কলের লাইন দিয়েছে, জল নেই। প্রধানের কোনও খোঁজ নেই। যাদের সত্যিই কাঁচা বাড়ি, তাঁরা কিছু পাননি। দেখে দেখে যাঁরা তৃণমূল করে দোতলা বাড়ি আছে, তাঁদেরও বাড়ি দেওয়া হয়েছে। আমি সত্যি বলছি কি না তদন্ত করে দেখুন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সত্যিই দুর্নীতি রুখতে চান তা হলে ওনাকে ১০০ জনের মধ্যে ৯৫ জন প্রধানকে বরখাস্ত করতে হবে।”

তাতলা-১ পঞ্চায়েত সদস্য মহানালার অনিমা সরকার বলেন, “আমার এই এলাকায় পাঁচ বছরে যতটা পেরেছি কাজ করেছি। যেহেতু আদিবাসী এলাকা, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। ঘর আর জলই এখানে মূল সমস্যা। পাঁচ বছরে আমি ঘরের লিস্ট সম্প্রতি একটা পাই, এর আগে দু’টো পেয়েছিলাম। সার্ভে হয়েছে। দেখা যাক কতদূর কী করা যায়। কিছু কিছু নাম কেটেও গিয়েছে। সত্যিই তারা ঘর পাওয়ার উপযুক্ত।”

Next Article