কলকাতা ও বনগাঁ: বঙ্গ বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহের সুর কি আরও চড়ছে? দলের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর (BJP MP Shantanu Thakur)। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, বিজেপির রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব পর্যাপ্ত নয়। সেই কারণেই দলের একাংশের উপর ক্ষুব্ধ বনগাঁর সাংসদ। এর পাশাপাশি বনগাঁর জেলা সভাপতি নিয়োগের বিষয়েও ক্ষোভ রয়েছে সাংসদের। যদিও কেন তিনি গ্রুপ ত্যাগ করেছেন তা নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইছেন তা শান্তনু ঠাকুর। তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংসদ বলেন, “কেন গ্রুপ ছেড়েছি, সময়মতো জানাব।” স্বাভাবিকভাবেই সাংসদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার ঘটনায় আরও অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।
বঙ্গ বিজেপিতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল কিছুদিন আগে। মাঝে কয়েকদিন সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ লাগিয়েছে পদ্ম শিবির। কিন্তু আবারও ধাক্কা, এবারের ক্ষত আরও বেশি। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেছেন খোদ সাংসদ। সাংসদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন।
জানা গিয়েছে, শান্তনু ঠাকুর কমিটি গঠনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে চিঠি দিয়েও সেই কথা জানিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে জেলা কমিটি তৈরি করা হয়েছে তাতে তিনি মোটেই সন্তুষ্ট নন। তিনি একজন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী, তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিনিধ। অথচ তাঁর সঙ্গে কোনও কথা বলা হয়নি এই কমিটি গঠনের সময়। জেলা সভাপতির পদে তো নয়ই, এ ছাড়াও কমিটির বিভিন্ন পদে যে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব রাখার কথা ছিল, তা রাখা হয়নি। একইসঙ্গে রাজ্য কমিটিতেও মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়নি বলেই মত শান্তনু ঠাকুরের।
সোমবার রাতে জানা যায়, বিজেপির বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। রাজ্য নেতাদের হোয়াটসঅ্য়াপ গ্রুপ, বাংলার বিজেপি সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সহ বেশ কিছু গ্রুপ থেকে তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন শান্তনু ঠাকুর। ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরই তিনি এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর পাশাপাশি, অন্য একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের কিছু বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন শান্তনু ঠাকুর। সেখানে বিজেপির বেশ কয়েকজন বিধায়কও থাকতে পারেন বলে খবর। সেখান থেকেও কোনও একটি সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
তাহলে কি কোনও চরম পথে যেতে চলেছেন শান্তনু ঠাকুর? বনগাঁর সাংসদ দলের হোয়াটসঅ্য়াপ গ্রুপ ছাড়তেই এই নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তবে, এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক মহলে একাংশের ধারণা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর পদত্যাগ করার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনওভাবে তিনি প্রতিবাদ জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বা বিজেপির নেতৃত্বের কাছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপির কারও থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। TV9 বাংলা বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগে চেষ্টা করলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, রাজ্য নেতৃত্বও বিষয়টি নিয়ে পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলবে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই বিষয়ে কী মত, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে। যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব পর্যাপ্ত নেই, তাহলে হয়ত ফের নতুন করে কিছু নাম ঢোকানো হতে পারে।
আরও পড়ুন : Mukul Roy: জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে সুপ্রিম-শুনানি, আজও হল না মুকুল-মামলার নিষ্পত্তি